পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - তৃতীয় খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/২৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

è di ভারতবর্ষ । রাম বা সে কুকুটারাম বিহার ধ্বংসমুখে নিপতিত হইয়াছিল। তখন ইনজাতির প্রবল আক্রামণে অশোকের প্রায় সকল কীৰ্ত্তি-স্তম্ভই বিনষ্ট হইয়াছিল। যে স্থাপত্য-কৌশল সন্দর্শন। করিয়া, ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতত্ত্ববিৎ সকলেই তৎসমুদায়কে দেবদৈত্যের অপূর্ব শিল্পচাতুৰ্য্য বলিয়া ভূয়সী প্ৰশংসা করিয়াছিলেন,কালবেশে বৈদেশিক আক্রমণের প্রবল অতিঘাতে, সে সকলই তখন বিনষ্ট হইয়াছিল। নালন্দা বিহার, লামা তারানাথের মতে, অশোকের অক্ষয় কীৰ্ত্তি এবং ভারতীয় শিল্পচাতুৰ্য্যের অন্যতম অপূর্ব নিদর্শন বলিয়া উল্লিখিত হইয়াছে। খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে চৈনিক পরিব্রাজক হুয়েন-সাং ত্যাহার যে বৰ্ণনা করিয়াছিলেন, তাহা পাঠ করিলে বিস্ময়ে স্তম্ভিত হইতে হয়। কিন্তু সে বিহারেরও এখন অস্তিত্ব সন্ধান করিয়া পাওয়া যায় না। যাহা হউক, অশোকের নিৰ্ম্মিত ভূপ-সমূহের যে কয়েকটীর অস্তিত্ব অধুনা সন্ধান করিয়া পাওয়া যায়, তন্মেধ্যে ভিলসা ভূপ, সাচী, বারহুত, বুদ্ধগয়া প্রভৃতি স্থানের ভূপসমূহ মৌৰ্য-যুগের আদর্শ শিল্পের শ্ৰেষ্ঠ নিদর্শন বক্ষে ধারণ করিয়া আছে। অধুনা যেমন সমাধির উপর প্রস্তুর-নিৰ্ম্মিত সুশোভন স্তম্ভ বা গৃহাদি নিৰ্ম্মিত হইয়া থাকে, সে সময়ে স্থূপের অভ্যন্তরে মৃতব্যক্তির দেহাবশেষ রক্ষা করিবার প্রথা বৰ্ত্তমান ছিল। তবে সে প্রথা অধুনাতন কালের প্রথা হইতে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। সে সময় মাত্র বুদ্ধদেব বা তৎসদৃশ যোগিাজনের দেহাবশেষ সংরক্ষিত হইত। সে সকল ভূপে বৌদ্ধ-ইতিহাসের কোনও স্মরণীয় বিষয়ও অঙ্কিত থাকিত। বৌদ্ধযুগে যখনই কোনও মহাত্মার দেহত্যাগ ঘটিয়াছে, তখনই তাহার দন্ত, নখ বা চুল লোকে ভক্তি প্রণোদিত হইয়া যত্নপূর্বক ভূপ-মধ্যে স্থাপন করিয়াছে। মহাপুরুষগণের স্মৃতি-রক্ষার্থ মানব-হৃদয়ের অকৃত্ৰিম ভক্তির উৎস হইতেই ভূপ-সমূহের সৃষ্টি-পুরিপুষ্ট । ভগবান গৌতম বুদ্ধ এবং তৎপূর্ববৰ্ত্তী ত্রয়োবিংশতি বুদ্ধের অস্থিকঙ্কাল এবং দেহাবশেষ কেশ-নখ প্রভৃতি, লোকে বিশেষ পবিত্র বলিয়া জ্ঞান করিত। সেইজন্য, বুদ্ধদেবের মহাপরিনির্বাণের পর, কুশীনগরের আটটী ভিন্ন ভিন্ন স্থানে তাহার দেহাস্থি বিতরিত হইয়াছিল। কথিত হয়, ঐ সকল স্থানে যে সকল স্কুপ নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল, উহাই আদি ভূপ। তৎপুর্বে অন্য কোথাও কোনও ভূপ নিৰ্ম্মাণ প্রথা বিদ্যমান ছিল না। যাহা হউক, কুশীনগরের ঐ সকল স্কুপের চিহ্নমাত্র অধুনা দৃষ্ট হয় না। বৌদ্ধ-গ্রন্থাদিতে উল্লিখিত আছে, বুদ্ধদেবের একটী শ্বাপচ-দন্ত উড়িষ্যা-প্রদেশে প্রেরিত হইয়াছিল। যে স্থানে ঐ দন্ত স্থাপিত হয়, অনেকে অনুমান করেন, সেই স্থান দন্তপুর নামে অভিহিত হইয়াছিল। প্রত্নতত্ত্ববিদগণ সেই দন্তপুরের অবস্থান-নির্দেশে বলিয়া থাকেন,-বৰ্ত্তমান পুরী সহরই। দন্তপুর নামে পরিচিত ছিল ; আর যে স্থানে বুদ্ধদেবের সেই দন্ত স্থাপিত হইয়াছিল, লেই স্থানেই বৰ্ত্তমান জগন্নাথদেবের মন্দির অবস্থিত। যাহা হউক, রাজচক্ৰবৰ্ত্তী অশোকের রাজত্বকালেই ভূপ-নিৰ্ম্মাণের বাহুল্য পরিদৃষ্ট হয়। ভারতবর্ষে আজি পৰ্য্যন্ত যতগুলি স্কুপ আবিস্কৃত হইয়াছে, কথিত হয়, সেই সকল স্কুপের মধ্যে ভিলসা ভূপই সর্বপ্রধান। এই ভূপ মধ্যভারতের ভূপাল-প্রদেশে অবস্থিত। তত্ৰত্য ভিলুস লাহরের নাম অনুসারে, স্তুপের নাম-ভিলসা ভূপ হইয়াছে। ঐ কূপের সন্নিকটে আরও ছয়টীি স্তৃপশ্রেণী বিদ্যমান। কিন্তু তাহদের মধ্যে নেটী সর্বপ্রধান, সেইটী সান্ধী স্কুপ নামে অভিহিত হইয়া থাকে।