পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।
৯৯

 শ্রীশ। চক্ষের সম্মুখ দিয়ে এক জোড়া মায়া স্বর্ণমৃগী ছুটে পালাল, ওরে নিরস্ত্র ব্যাধ তোর ছোটবার ক্ষমতা নেই! নিকষের উপর সোনার রেখার মত চকিত চোকের চাহনি দৃষ্টিপথের উপরে যেন আঁকা রয়ে গেল!

রসিকের প্রবেশ।

 শ্রীশ। সন্ধ্যাবেলায় এসে আপনাদের ত বিরক্ত করিনি রসিকবাবু?

 রসিক। ভিক্ষু-কক্ষে বিনিক্ষিপ্তঃ কিমিক্ষু নীরসো ভবেৎ? শ্রীশ বাবু আপনাকে দেখে বিরক্ত হব আমি কি এত বড় হতভাগ্য!

 শ্রীশ। অবলাকান্ত বাবু বাড়ি আছেন ত?

 রসিক। আছেন বৈ কি, এলেন বলে!

 শ্রীশ। না, না, যদি কাজে থাকেন তাহলে তাঁকে ব্যস্ত করে কাজ নেই—আমি কুঁড়ে লোক, বেকার মানুষের সন্ধানে ঘুরে বেড়াই।

 রসিক। সংসারে সেরা লোকেরাই কুঁড়ে এবং বেকার লোকেরাই ধন্য। উভয়ে সম্মিলন হলেই মণিকাঞ্চন যোগ! এই কুঁড়ে বেকারের মিলনের জন্যেই ত সন্ধ্যে বেলাটার সৃষ্টি হয়েছে। যোগীদের জন্যে সকাল বেলা, রোগীদের জন্যে রাত্রি, কাজের লোকের জন্যে দশটা চারটে, আর সন্ধ্যে বেলাটা, সত্যি কথা বলচি, চিরকুমার সভার অধিবেশনের জন্যে চতুর্ম্মুখ সৃজন করেন নি! কি বলেন শ্রীশ বাবু?

 শ্রীশ। সে কথা মানতে হবে বৈ কি, সন্ধ্যা চিরকুমার সভার অনেক পূর্ব্বেই সৃজন হয়েছে, সে আমাদের সভাপতি চন্দ্র বাবুর নিয়ম মানে না―

 রসিক। সে যে চন্দ্রের নিয়ম মানে তার নিয়মই আলাদা। আপনার কাছে খুলে বলি হাসবেন না শ্রীশবাবু, আমার এক তলার ঘরে কায়ক্লেশে একটি জানালা দিয়ে অল্প একটু জ্যোত্মা আসে—শুক্ল সন্ধ্যায় সেই জ্যোৎস্নার শুভ্র রেখাটি যখন আমার বক্ষের উপর এসে পড়ে তখন মনে