পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১২
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।

বেদনা বোধ চলে যায় তখন আর চিকিৎসার রাস্তা থাকে না। আমি ভাই স্পষ্টই কবুল করচি, স্ত্রীজাতির একটা আকর্ষণ আছে―চিরকুমার সভা যদি সেই আকর্ষণ এড়াতে চান তাহলে তাঁকে খুব তফাৎ দিয়ে যেতে হবে।

 শ্রীশ। ভুল, ভুল, ভয়ানক ভুল! তুমি তফাতে থাক্‌লে কি হবে, তাঁরা ত তফাতে থাকেন না। সংসার রক্ষার জন্যে বিধাতাকে এত নারী সৃষ্টি করতে হয়েছে যে, তাঁদের এড়িয়ে চলা অসম্ভব। অতএব কৌমার্য্য যদি রক্ষা করতে চাও তাহলে নারীজাতিকে অল্পে অল্পে সইয়ে নিতে হবে। ঐযে স্ত্রীসভ্য নেবার নিয়ম হয়েছে এতদিন পরে কুমারসভা চিরস্থায়ী হবার উপায় অবলম্বন করেছে। কিন্তু কেবল একটিমাত্র মহিলা হলে চলবে না বিপিন, অনেকগুলি স্ত্রীসভ্য চাই। বদ্ধ ঘরের একটি জানলা খুলে ঠাণ্ডা লাগালে সর্দ্দি ধরে, খোলা হাওয়ায় থাক্‌লে সে বিপদ নেই।

 বিপিন। আমি তোমার ঐ খোলা হাওয়া বদ্ধ হাওয়া বুঝিনে ভাই! যার সর্দ্দির ধাত তাকে সর্দ্দি থেকে রক্ষা কর্‌তে দেবতা মনুষ্য কেউ পারে না।

 শ্রীশ। তোমার ধাত কি বল্‌চে হে?

 বিপিন। সে কথা খোলসা করে বল্লেই বুঝতে পারবে তোমার ধাতের সঙ্গে তার চমৎকার মিল আছে। নাড়ীটা যে সব সময়ে ঠিক চিরকুমারের নাড়ীর মত চলে তা জাঁক করে বল্‌তে পারব না।

 শ্রীশ। ঐটে তোমার আর একটা, ভুল! চিরকুমারের নাড়ীর উপরে উনপঞ্চাশ পবনের নৃত্য হতে দাও—কোন ভয় নেই—বাঁধাবাঁধি চাপাচাপি কোরো না। আমাদের মত ব্রত যাদের, তারা কি হৃদয়টিকে তুলো দিয়ে মুড়ে রাখতে পারে? তাকে অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়ার মত ছেড়ে দাও, যে তাকে বাঁধবে তার সঙ্গে লড়াই কর!