পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।

 অক্ষয়। ওকে ঐজন্যেইত বর্ব্বরা নাম দিয়েছি। অয়ি বর্ব্বরে, ভগবান তোমাদের ক’টি সহোদরাকে এই একটি অক্ষয় বর দিয়ে রেখেছেন, তবু তৃপ্তি নেই?

 নীরু! সেই জন্যেইত লোভ আরো বেড়ে গেছে!

 নৃপ তাহার ছোট বোনকে সংযত করা অসাধ্য দেখিয়া তাহাকে টানিয়া লইয়া চলিল। নীরু চলিতে চলিতে দ্বারের নিকট হইতে মুখ ফিরাইয়া কহিল—এলে খবর দিয়ো মুখুজ্জে মশায়, ফাঁকি দিয়ে না! দেখ্চত সেজদিদি কি রকম চঞ্চল হয়ে উঠেছে।

 সহাস্যে সস্নেহে দুই বোনকে নিরীক্ষণ করিয়া শৈল কহিল—মুখুজ্জে মশায়, আমি ঠাট্টা করচিনে—আমি চিরকুমার সভার সভ্য হব। কিন্তু আমার সঙ্গে পরিচিত একজন কাউকে চাইত। তোমার বুঝি আর সভ্য হবার জো নেই?

 অক্ষয়। না আমি পাপ করেছি। তোমার দিদি আমার তপস্যা ভঙ্গ করে আমাকে স্বর্গ হতে বঞ্চিত করেছেন।

 শৈল। তাহলে রসিকদাদাকে ধরতে হচ্চে। তিনি ত কোন সভার সভ্য না হয়েও চিরকুমার ব্রত রক্ষা করেচেন।

 অক্ষয়। সভ্য হলেই এই বুড়ে বয়সে ব্রতটি খোয়াবেন। ইলিষ মাছ অম্নি দিব্যি থাকে, ধরলেই মারা যায়—প্রতিজ্ঞাও ঠিক তাই, তাকে বাঁধ্লেই তার সর্ব্বনাশ।

 এমন সময় সম্মুখের মাথায় টাক, পাঁকা গোঁফ, গৌরবর্ণ দীর্ঘাকৃতি রসিকদাদা আসিয়া উপস্থিত হইলেন। অক্ষয় তাঁহাকে তাড়া করিয়া গেল—কহিল, ওরে পাষণ্ড, ভণ্ড, অকাল কুষ্মাণ্ড!

 রসিক প্রসারিত দুই হস্তে তাহাকে সম্বরণ করিয়া কহিলেন—কেনহে,—মত্তমন্থর কুঞ্জ-কুঞ্জর পুঞ্জ-অঞ্জনবর্ণ।

 অক্ষয়। তুমি আমার শ্যালীপুষ্পবনে দাবানল আন্তে চাও?