পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।
১১৯

 শ্রীশ। রসিকবাবু আপনার ঝুলি যে একেবারে ভরা। এমন কত তর্জ্জমা করে রেখেছেন?

 রসিক। বিস্তর। লক্ষ্মীত এলেন না, কেবল বাণীকে নিয়েই দিন যাপন করছি।

 শ্রীশ। ওহে বিপিন, অভিসার ব্যাপারটা কল্পনা করতে বেশ লাগে।

 বিপিন। ওটা পুনর্ব্বার চালাবার জন্যে চিরকুমার সভায় একটা প্রস্তাব এনে দেখ না!

 শ্রীশ। কতকগুলো জিনিষ আছে যার আইডিয়াটা এত সুন্দর যে, সংসারে সেটা চালাতে সাহস হয় না। যে রাস্তায় অভিসার হতে পারে, যেখানে কামিনীদের হার থেকে মুক্তো ছিঁড়ে ছড়িয়ে পড়ে সে রাস্তা কি তোমার পটলডাঙ্গা ষ্ট্রীট? সে রাস্তা জগতে কোথাও নেই। বিরহিনীর হৃদয় নীলাম্বরী পরে’ মনোরাজ্যের পথে ঐ রকম করে বেরিয়ে থাকে— বক্ষের উপর থেকে মুক্তো ছিঁড়ে পড়ে চেয়েও দেখে না—সত্যিকার মুক্তো হলে কুড়িয়ে নিত! কি বলেন রসিকবাবু।

 রসিক। সে কথা মান্‌তেই হয়—অভিসারটা মনে মনেই ভাল, গাড়ি-ঘোড়ার রাস্তায় অত্যন্ত বেমানান্। আশীর্ব্বাদ করি শ্রীশবাবু, এই রকম বসন্তের জ্যোৎস্নারাত্রে কোন একটি জাল্‌না থেকে কোন এক রমণীর ব্যাকুল হৃদয় তোমার বাসার দিকে যেন অভিসারে যাত্রা করে।

 শ্রীশ। তা করবে রসিকবাবু আপনার আশীর্ব্বাদ ফলবে। আজকের হাওয়াতে সেই খবরটা আমি মনে মনে পাচ্চি। বিশে ডাকাত যেমন খবর দিয়ে ডাকাতী করত, আমার অজানা অভিসারিকা তেম্‌নি পূর্ব্বে হতেই আমাকে অভিসারের খবর পাঠিয়েছে।

 বিপিন। তোমার সেই ছাতের বারান্দাটা সাজিয়ে প্রস্তুত হয়ে থেকো।