পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ

 অক্ষয়কুমায়ের শ্বশুর হিন্দুসমাজে ছিলেন, কিন্তু তাঁহার চালচলন অত্যন্ত নব্য ছিল। মেয়েদের তিনি দীর্ঘকাল অবিবাহিত রাখিয়া লেখা পড়া শিখাইতে ছিলেন। লোকে আপত্তি করিলে বলিতেন আমরা কুলীন, আমাদের ঘরে ত চিরকালই এইরূপ প্রথা।

 তাঁহার মৃত্যুর পর বিধবা জগত্তারিণীর ইচ্ছা, লেখা পড়া বন্ধ করিয়া মেয়েগুলির বিবাহ দিয়া নিশ্চিন্ত হন। কিন্তু তিনি ঢিলা প্রকৃতির স্ত্রীলোক, ইচ্ছা যাহা হয় তাহার উপায় অন্বেষণ করিয়া উঠিতে পারেন না। সময় যতই অতীত হইতে থাকে, আর পাঁচজনের উপর দোষারোপ করিতে থাকেন।

 জামাতা অক্ষয়কুমার পূরা নব্য। শ্যালীগুলিকে তিনি পাস করাইয়া নব্যসমাজের খোলাখুলি মন্ত্রে দীক্ষিত করিতে ইচ্ছুক। সেক্রেটাবিয়েটে তিনি বড় রকমের কাজ করেন, গরমের সময় তাঁহাকে সিম্‌লা পাহাড়ে আপিস করিতে হয়, অনেক রাজঘরের দূত, বড় সাহেবের সহিত বোঝা পড়া করাইয়া দিবার জন্য বিপদে আপদে তাঁহার হাতে পায়ে আসিয়া ধরে। এই সকল নানা কারণে শ্বশুর বাড়িতে তাঁহার পসার বেশি। বিধবা শ্বাশুড়ি তাঁহাকেই অনাথা পরিবারের অভিভাবক বলিয়া জ্ঞান করেন। শীতের কয়মাস শ্বাশুড়ির পীড়াপীড়িতে তিনি কলিকাতায় তাঁহার ধনী শ্বশুর গৃহেই যাপন করেন। সেই কয়মাস তাঁহার শ্যালীসমিতিতে উৎসব পড়িয়া যায়।