পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।
৩৩

 অক্ষয়। চারটিতে মিলে স্মরণশক্তি জুড়ে বসে আছ, আর কিছু কি মনে রাখ্‌তে দিলে?

সকলি ভুলেছে ভোলামন
ভোলেনি ভোলেনি শুধু ঐ চন্দ্রানন।

 ১০ নম্বর মধুমিস্ত্রির গলিতে একতলার একটি ঘরে চিরকুমার সভার অধিবেশন হয়। বাড়িটি সভাপতি চন্দ্রমাধব বাবুর বাসা। তিনি লোকটি ব্রাহ্ম কালেজের অধ্যাপক। দেশের কাজে অত্যন্ত উৎসাহী; মাতৃভূমির উন্নতির জন্য ক্রমাগতই নানা মৎলব তাঁহার মাথায় আসিতেছে। শরীরটি কৃশ কিন্তু কঠিন, মাথাটা মস্ত, বড় দুইটি চোখ অন্যমনস্ক খেয়ালে পরিপূর্ণ। প্রথমটা সভায় সভ্য অনেকগুলি ছিল। সম্প্রতি সভাপতি বাদে তিনটিতে আসিয়া ঠেকিয়াছে। যুথভ্রষ্টগণ বিবাহ করিয়া গৃহী হইয়া রোজগারে প্রবৃত্ত। এখন তাঁহারা কোনপ্রকার চাঁদার খাতা দেখিলেই প্রথমে হাসিয়া উড়াইয়া দেন, তাহাতেও খাতাধারী টিঁকিয়া থাকিবার লক্ষণ প্রকাশ করিলে গালি দিতে আরম্ভ করেন। নিজেদের দৃষ্টান্ত স্মরণ করিয়া দেশহিতৈষীর প্রতি তাঁহাদের অত্যন্ত অবজ্ঞা জন্মিয়াছে।

 বিপিন, শ্রীশ, এবং পূর্ণ তিনটি সভ্য কালেজে পড়িতেছে, এখনো সংসারে প্রবেশ করে নাই। বিপিন ফুটবল্ খেলে, তাহার শরীরে অসামান্য বল, পড়াশুনা কখন্ করে কেহ বুঝিতে পারে না, অথচ চট্‌পট্‌ একজামিন পাস করে। শ্রীশ বড় মানুষের ছেলে, স্বাস্থ্য তেমন ভাল নয় তাই বাপ মা পড়াশুনার দিকে তত বেশী উত্তেজনা করেন না—শ্রীশ নিজের খেয়াল লইয়া থাকে। বিপিন এবং শ্রীশের বন্ধুত্ব অবিচ্ছেদ্য।

 পূর্ণ গৌরবর্ণ, একহারা, লঘুগামী, ক্ষিপ্রকারী, দ্রুতভাষী, সকল বিষয়ে গাঢ় মনোেযোগ, চেহারা দেখিয়া মনে হয় দৃঢ় সংকল্প কাজের লোক।

 সে ছিল চন্দ্রমাধব বাবুর ছাত্র। ভালরূপ পাশ করিয়া ওকালতী দ্বারা সুচারুরূপ জীবিকা নির্ব্বাহ করিবার প্রত্যাশায় সে রাত জাগিয়া