পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৮
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ

একটা তৃতীয় মত প্রকাশ করে বসি তাহলে বিরোধানলে তৃতীয় আহুতি দান করা হবে—অতএব আমার প্রস্তাব এই যে সভাপতি মশায় আমাদের কাজ নির্দ্দেশ করে দেবেন এবং আমরা তাই শিরোধার্য্য করে নিয়ে বিনা বিচারে পালন করে যাব, কার্য্যসাধন এবং ঐক্য সাধনের এই এক মাত্র উপায় আছে।

 পাশের ঘরে এক ব্যক্তি আবার একবার নড়িয়া চড়িয়া বসিল এবং তাহার চাবি ঝন্ করিয়া উঠিল।

 বিষয়কর্ম্মে চন্দ্রমাধব বাবুর মত অপটু কেহ নাই কিন্তু তাঁহার মনের খেয়াল বাণিজ্যের দিকে। তিনি বলিলেন, আমাদের প্রথম কর্ত্তব্য ভারতবর্ষের দারিদ্র্যমোচন, এবং তার আশু উপায় বাণিজ্য। আমরা কয়জনে বড় বাণিজ্য চালাতে পারিনে, কিন্তু তার সূত্রপাত করতে পারি। মনে কর আমরা সকলেই যদি দিয়াশলাই সম্বন্ধে পরীক্ষা আরম্ভ করি। এমন যদি একটা কাটি বের করতে পারি যা সহজে জ্বলে, শীঘ্র নেবে না এবং দেশের সর্ব্বত্র প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়, তা হলে দেশে সস্তা দেশালাই নির্ম্মাণের কোন বাধা থাকে না।—এই বলিয়া জাপানে এবং য়ুরোপে সবসুদ্ধ কত দেশালাই প্রস্তুত হয়,তাহাতে কোন্ কোন্ কাঠের কাঠি ব্যবহার হয়, কাঠির সঙ্গে কি কি দাহ্যপদার্থ মিশ্রিত করে, কোথা হইতে কত দেশালাই রপ্তানি হয়, তাহার মধ্যে কত ভারতবর্ষে আসে এবং তাহার মূল্য কত, চন্দ্রমাধববাবু তাহা বিস্তারিত করিয়া বলিলেন। বিপিন শ্রীশ নিস্তব্ধ হইয়া বসিয়া রহিল। পূর্ণ কহিল, পাকাটি এবং খ্যাংরা কাঠি দিয়ে শীঘ্রই পরীক্ষা করে দেখ্‌ব।—শ্রীশ মুখ ফিরাইয়া হাসিল।

 এমন সময় ঘরের মধ্যে অক্ষয় আসিয়া প্রবেশ করিলেন। কহিলেন, মশায় প্রবেশ করতে পারি?

 ক্ষীণদৃষ্টি চন্দ্রমাধব বাবু হঠাৎ চিনিতে না পারিয়া ভ্রূকুঞ্চিত করিয়া অবাক্ হইয়া চাহিয়া রহিলেন। অক্ষয় কহিলেন, মশায় ভয় পাবেন না