পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ

 চন্দ্রবাবু পান তামাকের জন্য সনাতন চাকরকে ডাকিবার উপক্রম করিলেন। পূর্ণ কহিল আমি ডাকিয়া দিতেছি বলিয়া উঠিল;—পাশের ঘরে চাবি এবং চুড়ি এবং সহসা পলায়নের শব্দ একসঙ্গে শোনা গেল।

 অক্ষয় তাহাকে থামাইয়া কহিলেন, “যস্মিন্ দেশে যদাচারঃ” যতক্ষণ আমি এখানে আছি ততক্ষণ আমি আপনাদের চিরকুমার—কোন প্রভেদ নেই! এখন আমার প্রস্তাবটা শুনুন্।

 চন্দ্রবাবু টেবিলের উপর কার্য্যবিবরণের খাতাটির প্রতি অত্যন্ত ঝুঁকিয়া পড়িয়া মন দিয়া শুনিতে লাগিলেন।

 অক্ষয় কহিলেন আমার কোন মফস্বলের ধনী বন্ধু তাঁর একটি সন্তানকে আপনাদের কুমার সভার সভ্য কর্‌তে ইচ্ছা করেচেন।

 চন্দ্রবাবু বিস্মিত হইয়া কহিলেন, বাপ ছেলেটির বিবাহ দিতে চান না!

 অক্ষয়। সে আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন—বিবাহ সে কোনক্রমেই করবে না আমি তার জামিন রইলুম। তার দূর সম্পর্কের এক দাদা সুদ্ধ সভ্য হবেন। তাঁর সম্বন্ধেও আপনারা নিশ্চিন্ত থাক্‌তে পারেন, কারণ যদিচ তিনি আপনাদের মত সুকুমার নন কিন্তু আপনাদের সকলের চেয়ে বেশী কুমার, তাঁর বয়স ৬০ পেরিয়ে গেছে—সুতরাং তাঁর সন্দেহের বয়সটা আর নেই, সৌভাগ্যক্রমে সেটা আপনাদের সকলেরই আছে।

 অক্ষয়বাবুর প্রস্তাবে চিরকুমার সভা প্রফুল্ল হইয়া উঠিল, সভাপতি কহিলেন সভ্যপদপ্রার্থীদের নাম ধাম বিবরণ—

 অক্ষয়। অবশ্যই তাঁদের নাম ধাম বিবরণ একটা আছেই—সভাকে তার থেকে বঞ্চিত করতে পারা যাবে না—সভ্য যখন পাবেন তখন নাম ধাম বিবরণ সুদ্ধই পাবেন। কিন্তু আপনাদের এই একতালার স্যাঁতসেঁতে ঘরটি স্বাস্থ্যের পক্ষে অনুকূল নয়; আপনাদের এই চিরকুমার ক’টির চিরত্ব যাতে হ্রাস না হয় সেদিকে একটু দৃষ্টি রাখ্‌বেন!