পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।

বাষ্পীয় শকটে চড়ি নারী চূড়ামণি
পুরবালা চলি যবে গেলা কাশীধামে
বিকালে, কহ হে দেবি অমৃত ভাষিণী
কোন্ বরাঙ্গনে বরি বরমাল্যদানে
যাপিলা বিচ্ছেদ মাস শ্যালীত্রয়ীশালী
শ্রীঅক্ষয়!

 পুরবালা। (সগর্ব্বে) আমার মাথা খাও, ঠাট্টা নয়, তুমি একটা সত্যিকার কাব্য লেখনা!

 অক্ষয়। মাথা খাওয়ার কথাটা যদি বল্লে, আমি নিজের মাথাটি খেয়ে অবধি বুঝেছি ওটা সুখাদ্যের মধ্যে গণ্য নয়। আর ঐ কাব্য লেখা, ও কার্য্যটাও সুসাধ্য বলে জ্ঞান করিনে। বুদ্ধিতে আমার এক জায়গায় ফুটো আছে, কাব্য জম্‌তে পারে না—ফস্ ফস্ করে বেরিয়ে পড়ে।

তুমি জান আমার গাছে ফল কেন না ফলে!
যেমনি ফুলটি ফুটে ওঠে আনি চরণতলে!

কিন্তু আমার প্রশ্নের ত কোন উত্তর পেলুম না। কৌতূহলে মরে যাচ্চি। কাশীতে যে চলেছ, উৎসাহটা কিসের জন্যে? আপাততঃ সেই বিষ্ণু দূতটাকে মনে মনে ক্ষমা করলুম, কিন্তু ভগবান্ ভূতনাথ ভবানীপতির অনুচরগুলোর উপর ভারি সন্দেহ হচ্চে। শুনেছি নন্দী ও ভূঙ্গি অনেক বিষয়ে আমাকেও জেতে, ফিরে এসে হয়ত এই ভূতটিকে পছন্দ না হতেও পারে!

 অক্ষয়ের পরিহাসের মধ্যে একটু যে অভিমানের জ্বালা ছিল, সেটুকু পুরবালা অনেক্ষণ বুঝিয়াছে। তাহা ছাড়া, প্রথমে কাশী যাইবার প্রস্তাবে তাহার যে উৎসাহ হইয়াছিল, যাত্রার সময় যতই নিকটবর্ত্তী হইতে লাগিল ততই তাহা ম্লান হইয়া আসিতেছে।

 সে কহিল—আমি কাশী যাব না।