পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।

 রসিকদাদা। (টাকে হাত বুলাতে বুলাইতে) তা মা, যেটুকু বুদ্ধি আছে তার পরিচয় সর্ব্বদাই দিচ্চি—ও ত চেপে রাখবার জো নেই—ধরা পড়তেই হবে। ভাঙা চাকাটাই সব চেয়ে খড় খড় করে—তিনি যে ভাঙা সেটা পাড়াসুদ্ধ খবর পায়। সেই জন্যেই বড়মা চুপচাপ করে থাক্‌তেই চাই, কিন্তু তুমি যে আবার চালাতেও ছাড় না!

 নিজের শৈথিল্যে যাহার কিছুই মনের মত হয় না, সর্ব্বদা ভর্ৎসনা করিবার জন্য তাহার একটা হতভাগ্যকে চাই। রসিকদাদা জগত্তারিণীর বহিস্থিত আত্মগ্লানি বিশেষ।

 জগত্তারিণী। আমি তাহলে হারাণের বাড়ি চল্লুম, একেবারে তাদের সঙ্গে গাড়িতে উঠ্‌ব—এর পরে আর যাত্রার সময় নেই। পুরো, তোরাত দিনক্ষণ মানিস্‌নে, ঠিক সময়ে ইষ্টেশনে যাস্!

 তাঁহার কন্যাজামাতার অসামান্য আসক্তি মা বেশ অবগত ছিলেন। পঞ্জিকার খাতিরে শেষ মুহূর্ত্তের পূর্ব্বে তাহাদের বিচ্ছেদ সংঘটনের চেষ্টা তিনি বৃথা বলিয়াই জানিতেন।

 কিন্তু পুরবালা যখন বলিল, মা আমি কাশী যাব না—সেটা তিনি বাড়াবাড়ি মনে করিলেন। পুরবালার প্রতি তাঁহার বড় নির্ভর। সে তাঁহার সঙ্গে যাইতেছে বলিয়া তিনি নিশ্চিন্ত আছেন। পুরবালা স্বামীর সঙ্গে সিম্‌লা যাতায়াত করিয়া বিদেশ ভ্রমণে পাকা হইয়াছে; পুরুষ অভিভাবকের অপেক্ষা পুরবালাকেই তিনি পথসঙ্কটে সহায়রূপে আশ্রয় করিয়াছেন। হঠাৎ তাহার অসম্মতিতে বিপন্ন হইয়া জগত্তারিণী তাঁহার জামাতার মুখের দিকে চাহিলেন।

 অক্ষয় তাঁহার শ্বাশুড়ির মনের ভাব বুঝিয়া কহিলেন—সে কি হয়? তুমি মার সঙ্গে না গেলে ওঁর অসুবিধা হবে। আচ্ছা মা, তুমি এগোও, আমি ওকে ঠিক সময়ে ষ্টেশনে নিয়ে যাব। জগত্তারিণী নিশ্চিন্ত হইয়া প্রস্থান করিলেন। রসিক দাদা টাকে হাত বুলাইতে