পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।

 শৈল ঈষৎ বিচলিত হইয়া কহিল, আমিও কর্ত্তুম না মুখুজ্জেমশায়! বাস্তবিক ইহারা দুই ভাইয়ের মতই ছিল। কেবল সেই ভ্রাতৃভাবের সহিত কৌতুকময় বয়স্যভাব মিশ্রিত হইয়া কোমল সম্বন্ধ উজ্জল হইয়া উঠিয়াছিল।

 পুরবালা শৈলকে বুকের কাছে টানিয়া কহিল, এই বেশে তুই কুমার সভার সভ্য হতে যাচ্চিস্ শৈল?

 শৈল। অন্য বেশে হতে গেলে যে ব্যাকরণের দোষ হয় দিদি! কি বল রসিক দাদা!

 রসিক। তা ত বটেই, ব্যাকরণ বাঁচিয়ে ত চলতেই হবে। ভগবান পাণিনি বোপদেব এঁরা কি জন্যে জন্মগ্রহণ করেছিলেন? কিন্তু ভাই শ্রীমতী শৈলবালার উত্তর চাপ্ কান্ প্রত্যয় করলেই কি ব্যাকরণ রক্ষে হয়!

 অক্ষয়। নতুন মুগ্ধবোধে তাই লেখে। আমি লিখে পড়ে দিতে পারি চিরকুমার সভার মুগ্ধদের কাছে শৈল যেমন প্রত্যয় করাবে তাঁরা তেমনি প্রত্যয় যাবেন। কুমারদের ধাতু আমি জানি কি না।

 পুরবালা একটুখানি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া শৈলকে কহিল—তোর মুখুজ্জেমশায়কে আর এই বুড়ো সমবয়সীটিকে নিয়ে তোর খেলা তুই আরম্ভ কর—আমি মার সঙ্গে কাশী চল্লুম।

 পুরবালা এই সকল নিয়মবিরুদ্ধ ব্যাপার মনে মনে পছন্দ করিত না। কিন্তু তাহার স্বামীর ও ভগিনীটির- বিচিত্র কৌতুক লীলায় সর্ব্বদা বাধা দিতেও তাহার মন সরিত না। নিজের স্বামী-সৌভাগ্যের কথা স্মরণ করিয়া বিধবা বোনটির প্রতি তাহার করুণা ও প্রশ্রয়ের অন্ত ছিল না। ভাবিত, হতভাগিনী যেমন করিয়া ভুলিয়া থাকে থাক্। পুরবালা জিনিষপত্র গুছাইতে গেল।

 এমন সময় নৃপবালা ও দীরবালা ঘরে প্রবেশ করিয়াই পলায়নোদ্যত হইল। নীর দরজার আড়াল হইতে আর একবার ভাল করিয়া