পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।
৫১

তাকাইয়া “মেজদিদি” বলিয়া ছুটিয়া আসিল—কহিল, মেজদিদি তােমাকে ভাই জড়িয়ে ধর্ত্তে ইচ্ছে করছে, কিন্তু ঐ চাপকানে বাধ্‌ছে। মনে হচ্চে তুমি যেন কোন্ রূপকথার রাজপুত্র, তেপান্তর মাঠ পেরিয়ে আমাদের উদ্ধার করতে এসেচ।

 নীরর সমুচ্চ কণ্ঠস্বরে আশ্বস্ত হইয়া নৃপও ঘরে প্রবেশ করিয়া মুগ্ধ নেত্রে চাহিয়া রহিল। নীর তাহাকে টানিয়া লইয়া কহিল, অমন করে লােভীর মত তাকিয়ে আছিস্ কেন? যা মনে করছিস্ তা নয়, ও তাের দুষ্যন্ত নয়―ও আমাদের মেজদিদি!

 রসিক।

ইয়মধিকমনােজ্ঞা চাপ্‌কানেনাপি তন্বী
কিমিব হি মধুরানাং মণ্ডনং নাকৃতীনাম্!

 অক্ষয়। মূঢ়ে, তােরা কেবল চাপ্‌কানটা দেখেই মুগ্ধ! গিল্টির এত আদর? এদিকে যে খাঁটি সােনা দাঁড়িয়ে হাহাকার করচে।

 নীর। আজ কাল খাঁটি সােনার দর যে বড় বেশি, আমাদের এই গিল্টিই ভাল! কি বল ভাই মেজদিদি! বলিয়া শৈলর কৃত্রিম গোঁফটা একটু পাকাইয়া দিল।

 রসিক। (নিজেকে দেখাইয়া) এই খাঁটি সােনাটি খুব সস্তায় যাচ্চে ভাই—এখনাে কোন ট্যাঁকশালে গিয়ে কোন মহারাণীর ছাপটি পর্য্যন্ত পড়েনি!

 নীর। আচ্ছা বেশ, সেজদিদিকে দান করলুম। (বলিয়া রসিক দাদার হাত ধরিয়া নৃপর হাতে সমর্পণ করিল)। রাজি আছিস্ ত ভাই?

 নৃপ। তা আমি রাজি আছি।―বলিয়া রসিকদাদাকে একটা চৌকীতে বসাইয়া সে তাহার মাথার পাকাচুল তুলিয়া দিতে লাগিল।

 নীর শৈলর কৃত্রিম গোঁফে তা দিয়া পাকাইয়া তুলিবার চেষ্টা করিতে লাগিল। শৈল কহিল—আঃ কি কর্‌চিস্ আমার গোঁফ পড়ে যাবে!