পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।
৫৭

বর্ম্ম, অনুরাগ এবং সৌন্দর্য্যের ধর্ম্ম, সে জন্যেই তার পক্ষে প্রলোভনের ফাঁদ অনেক ছিল।

 বিপিন। তা হলে ভয়টুকুও আছে!

 শ্রীশ। আমার নিজের জন্য লেশমাত্র নেই। আমি আমার মনকে পৃথিবীর বিচিত্র সৌন্দর্য্যে ব্যাপ্ত করে রেখে দিই, কোনও একটা ফাঁদে আমাকে ধরে কার সাধ্য, কিন্তু তোমরা যে দিনরাত্রি ফুট্‌বল্‌ টেনিস ক্রিকেট নিয়ে থাক―তোমরা একবার পড়লে ব্যাট্‌বল্‌ গুলিডাণ্ডা সব সুদ্ধ ঘাড়মোড় ভেঙে পড়বে।

 বিপিন। আচ্ছা ভাই, সময় উপস্থিত হলে দেখা যাবে।

 শ্রীশ। ও কথা ভাল নয়! সময় উপস্থিত হবে না, সময় উপস্থিত হতে দেব না। সময় ত রথে চড়ে আসেন না―আমরা তাঁকে ঘাড়ে করে নিয়ে আসি―কিন্তু তুমি যে সময়টার কথা বলচ তাকে বহন অভাবে ফিরতেই হবে।

পূর্ণবাবুর প্রবেশ।

 উভয়ে। এস পূর্ণ বাবু!

 বিপিন তাহাকে কেদারাটা ছাড়িয়া দিয়া একটা চৌকী টানিয়া লইয়া বসিল। পূর্ণর সহিত শ্রীশ ও বিপিনের তেমন ঘনিষ্ঠতা ছিল না বলিয়া তাহাকে দুজনেই একটু বিশেষ খাতির করিয়া চলিত।

 পূর্ণ। তোমাদের এই বারান্দায় জ্যোৎস্নাটির মন রচনা কর নি―মাঝে মাঝে থামের ছায়া ফেলে ফেলে সাজিয়েছ ভাল!

 শ্রীশ। ছাদের উপর জ্যোৎস্না রচনা করা প্রভৃতি কতকগুলি অত্যাশ্চর্য্য ক্ষমতা জন্মাবার পূর্ব্ব হতেই আমার কাছে। কিন্তু দেখ পূর্ণ বাবু, ঐ দেশলাই করা টরা ও গুলো আমার ভাল আসে না।

 পূর্ণ। (ফুলের মালার দিকে চাহিয়া) সন্ন্যাসধর্ম্মেই কি তোমার অসামান্য দখল আছে না কি?