পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।
৬৭

 “নির্ম্মল, আমার গলার বোতামটা খুঁজে পাচ্চিনে!”

 “বোধ হয় ঐখানেই কোথাও আছে।”

 এরূপ অনাবশ্যক এবং অনির্দ্দিষ্ট সংবাদে কাহারও কোন উপকার নাই, বিশেষতঃ যাহার দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ। ফলতঃ এই সংবাদে অদৃশ্য বোম সম্বন্ধে কোন নূতন জ্ঞানলাতের সহায়তা না করিলেও নির্ম্মলার মানসিক অবস্থা সম্বন্ধে অনেকটা আলোক বর্ষণ করিল। কিন্তু অধ্যাপক চন্দ্রমাধব বাবুর দৃষ্টিশক্তি সেদিকেও যথেষ্ট প্রখর নহে। তিনি অন্য দিনের মতই নিশ্চিত নির্ভরের ভাবে কহিলেন—একবার খুঁজে দেখত ফেনি!

 নির্ম্মলা কহিল—তুমি কোথায় কি ফেল আমি কি খুঁজে বের করতে পারি?

 এতক্ষণে চন্দ্রবাবুর স্বভাবনিঃশঙ্ক মনে একটুখানি সন্দেহের সঞ্চার হইল— স্নিগ্ধ কণ্ঠে কহিলেন—তুমিই ত পার নির্ম্মল! আমার সমস্ত ত্রুটি সম্বন্ধে এত ধৈর্য্য আর কার আছে?

 নির্ম্মলার রুদ্ধ অভিমান চন্দ্রবাবুর স্নেহম্বরে অকস্মাৎ অশ্রুজলে বিগলিত হইবার উপক্রম করিল; নিঃশব্দে সম্বরণ করিবার চেষ্টা করিতে লাগিল।

 তাহাকে নিরুত্তর দেখিয়া চন্দ্রমাধববাবু নির্ম্মলার কাছে আসিলেন এবং যেমন করিয়া সন্দিগ্ধ মোহরটি চোখের খুব কাছে ধরিয়া পরীক্ষা করিতে হয় তেমনি করিয়া নির্ম্মলার মুখখানি দুই আঙুল দিয়া তুলিয়া ক্ষণকাল দেখিলেন এবং গম্ভীর মৃদু হাস্যে কহিলেন, নির্ম্মল আকাশে একটুখানি মালিন্য দেখচি যেন! কি হয়েছে বল দেখি?

 নির্ম্মলা জানিত চন্দ্রমাধব অনুমানের চেষ্টাও করিবেন না। যাহা স্পষ্ট প্রকাশমান নহে তাহা তিনি মনের মধ্যে স্থানও দিতেন না। তাঁহার নিজের চিত্ত যেমন শেষ পর্য্যন্ত স্বচ্ছ অন্যের নিকটও সেইরূপ একান্ত স্বচ্ছতা প্রত্যাশা করিতেন।