পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৮
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।

 নির্ম্মলা ক্ষুব্ধস্বরে কহিল―এত দিন পরে আমাকে তোমাদের চিরকুমার সভা থেকে বিদায় দিচ্চ কেন? আমি কি করেছি?

 চন্দ্রমাধববাবু আশ্চর্য্য হইয়া কহিলেন—চিরকুমার সভা থেকে তোমাকে বিদায়? তোমার সঙ্গে সে সভার যোগ কি?

 নির্ম্মলা। দরজার আড়ালে থাক লে বুঝি যোগ থাকে না? অন্ততঃ সেই যতটুকু যোগ তাই বা কেন যাবে?

 চন্দ্রবাবু। নির্ম্মল, তুমিত এ সভার কাজ করবে না—যারা কাজ করবে তাদের সুবিধার প্রতি লক্ষ্য রেখেই―

 নির্ম্মলা। আমি কেন কাজ করব না? তোমার ভাগ্নে না হয়ে ভাগ্নী হয়ে জন্মেছি বলেই কি তোমাদের হিতকার্য্যে যোগ দিতে পারব না? তবে আমাকে এত দিন শিক্ষা দিলে কেন? নিজের হাতে আমার সমস্ত মন প্রাণ জাগিয়ে দিয়ে শেষকালে কাজের পথ রোধ করে দাও কি বলে?

 চন্দ্রমাধববাবু এই উচ্ছ্বাসের জন্য কিছুমাত্র প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি যে নির্ম্মলাকে নিজে কি ভাবে গড়িয়া তুলিয়াছিলেন তাহা নিজেই জানিতেন না। ধীরে ধীরে কহিলেন―নির্ম্মল, এক সময়ে ত বিবাহ করে, তোমাকে সংসারের কাজে প্রবৃত্ত হতে হবে―চিরকুমার সভার কাজ―

 “বিবাহ আমি করব না!”

 “তবে কি করবে বল?”

 “দেশের কাজে তোমার সাহায্য করব।”

 “আমরা ত সন্ন্যাস ব্রত গ্রহণ করতে প্রস্তুত হয়েছি!”

 “ভারতবর্ষে কি কেউ কখনো সন্ন্যাসিনী হয়নি?”

 চন্দ্রমাধববাবু স্তম্ভিত হইয়া হারানো বোতামটার কথা একেবারে ভুলিয়া গেলেন। নিরুত্তর হইয়া দাঁড়াইয়া রহিলেন।

 উৎসাহদীপ্তিতে মুখ আরক্তিম করিয়া নির্ম্মলা কহিল—মামা, যদি কোন মেয়ে তোমাদের ব্রত গ্রহণের জন্যে অন্তরের সঙ্গে প্রস্তুত হয় তবে