পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৪
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।

সেটাকে খণ্ডন কর্‌লেই আমার কথাটাকে খণ্ডন করা হল! উপমা কেবল খানিক দূর পর্য্যন্ত খাটে―

 বিপিন। অর্থাৎ যতটুকু কেবল তোমার যুক্তির পক্ষে খাটে।

 এই দুই পরম বন্ধুর মধ্যে এমন বিবাদ সর্ব্বদাই ঘটিয়া থাকে। পূর্ণ অত্যন্ত বিমনা হইয়া বসিয়াছিল—সে কহিল, বিপিনবাবু আমার মত এই যে, আমাদের এই সকল কাজে মেয়েরা অগ্রসর হয়ে এলে তাতে তাঁদের মাধুর্য্য নষ্ট হয়।

 চন্দ্রবাবু একখানা বই চক্ষের অত্যন্ত কাছে ধরিয়া কহিলেন মহৎ কার্য্যে যে মাধুর্য্য নষ্ট হয় সে মাধুর্য্য সযত্নে রক্ষা কর্‌বার যোগ্য নয়!

 শ্রীশ বলিয়া উঠিল—না চন্দ্রবাবু আমি ওসব সৌন্দর্য্য মাধুর্য্যের কথা আন্‌চিইনে। সৈন্যদের মত এক চালে আমাদের চল্‌তে হবে, অনভ্যাস বা স্বাভাবিক দুর্ব্বলতা বশত যাঁদের পিছিয়ে পড়বার সম্ভাবনা আছে তাঁদের নিয়ে ভারগ্রস্ত হলে আমাদের সমস্তই ব্যর্থ হবে!

 এমন সময় নির্ম্মলা অকুণ্ঠিত মর্য্যাদার সহিত গৃহের মধ্যে প্রবেশ করিয়া নমস্কার করিয়া দাঁড়াইল। হঠাৎ সকলেই স্তম্ভিত হইয়া গেল। যদিচ একটা অপূর্ণ ক্ষোভে তাহার কণ্ঠস্বর আর্দ্র ছিল তথাপি সে দৃঢ়স্বরে কহিল—আপনাদের কি উদ্দেশ্য এবং আপনারা দেশের কাজে কতদূর পর্য্যন্ত যেতে প্রস্তুত আছেন তা আমি কিছুই জানিনে,—কিন্তু আমি আমার মামাকে জানি, তিনি যে পথে যাত্রা করে চলেছেন আপনারা কেন আমাকে সে পথে তাঁর অনুসরণ কর্‌তে বাধা দিচ্ছেন?

 শ্রীশ নিরুত্তর, পূর্ণ কুণ্ঠিত অনুতপ্ত, বিপিন প্রশান্ত গম্ভীর, চন্দ্রবাবু সুগভীর চিন্তামগ্ন।

 পূর্ণ এবং ঐশের প্রতি বর্ষায় ব্রৌদ্ররশ্মির ন্যায় অশ্রুজলস্নাত কটাক্ষপাত করিয়া নির্ম্মলা কহিল—আমি যদি কাজ কর্‌তে চাই, যিনি আমার আশৈশবের গুরু, মৃত্যু পর্য্যন্ত যদি সকল শুভ চেষ্টায় তাঁর অনুবর্ত্তিনী হতে ইচ্ছা