পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।
৮১

 শ্রীশ। চন্দ্রবাবুর বাসায় তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল, কিন্তু হঠাৎ তাঁর শরীরটা খারাপ হয়েছে বলে আজ আর আস্‌তে পারলেন না।

 অক্ষয়। (পথের দিকে চাহিয়া) একটু বসুন্,―আমি চন্দ্রবাবুর অপেক্ষায় দ্বারের কাছে গিয়ে দাঁড়াই। তিনি অন্ধমানুষ কোথায় যেতে কোথায় গিয়ে পড়বেন তার ঠিক নেই―কাছাকাছি এমন স্থানও আছে যেখানে কুমারসভার অধিবেশন কোন মতেই প্রার্থনীয় নয়। বলিয়া অক্ষয় নামিয়া গেলেন।

 আজ চন্দ্রবাবুর বাসায় হঠাৎ নির্ম্মলা আবির্ভূত হইয়া চিরকুমারদলের শান্তমনের মধ্যে যে একটা মন্থন উৎপন্ন করিয়া দিয়াছিল তাহার অভিঘাত বোধ করি এখনো শ্রীশের মাথায় চলিতেছিল। দৃশ্যটি অপূর্ব্ব, ব্যাপারটি অভাবনীয়, এবং নির্ম্মলার কমনীয় মুখে যে একটি দীপ্তি ও তাহার কথা গুলির মধ্যে যে একটি আন্তরিক আবেগ ছিল তাহাতে তাঁহাকে বিস্মিত ও তাঁহার চিন্তার স্বাভাবিক গতিকে বিক্ষিপ্ত করিয়া দিয়াছে। তিনি লেশমাত্র প্রস্তুত ছিলেন না বলিয়া এই আকস্মিক আঘাতেই বিপর্য্যস্ত হইয়া পড়িয়াছেন! তর্কের মাঝখানে হঠাৎ এমন জায়গা হইতে এমন করিয়া এমন একটা উত্তর আসিয়া উপস্থিত হইবে স্বপ্নেও মনে করেন নাই বলিয়াই উত্তরটা তাঁহার কাছে এমন প্রবল হইয়া উঠিল। উত্তরের প্রত্যুত্তর থাকিতে পারে, কিন্তু সেই আবেগকম্পিত ললিতকণ্ঠ, সেই গূঢ় অশ্রুকরুণ বিশাল কৃষ্ণচক্ষুর দীপ্তিচ্ছটার প্রত্যুত্তর কোথায়? পুরুষের মাথায় ভাল ভাল যুক্তি থাকিতে পারে, কিন্তু যে আরক্ত অধর কথা বলিতে গিয়া স্ফুরিত হইতে থাকে, যে কোমল কপোল দুটি দেখিতে দেখিতে ভাবের আভাসে করুণাভ হইয়া উঠে তাহার বিরুদ্ধে দাঁড় করাইতে পারে পুরুষের হাতে এমন কি আছে?

 পথে আসিতে আসিতে দুই বন্ধুর মধ্যে কোন কথাই হয় নাই। এখানে আসিয়া ঘরে প্রবেশ না করিতেই যে শব্দগুলি শোনা গেল, অন্য