পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।
৯১

 শৈল। কুমারসভার উপর স্ত্রীজাতির আক্রোশের খবর রসিক দাদা কোথায় পেলে?

 রসিক। বিপদের খবর না পেলে কি আর সাবধান করতে নেই? এক চক্ষু হরিণ যে দিকে কাণা ছিল সেই দিক থেকেই ত তীর খেয়েছিল― কুমারসভা যদি স্ত্রীজাতির প্রতিই কাণা হন তাহলে সেই দিক থেকেই হঠাৎ ঘা খাবেন।

 শ্রীশ। (বিপিনের প্রতি মৃদু স্বরে) এক চক্ষু হরিণ ত আজ একটা তীর খেয়েছেন, একটি সত্য ধুলিশায়ী।

 চন্দ্র। কেবল পুরুষ নিয়ে যারা সমাজের ভাল করতে চায় তারা এক পায়ে চল্‌তে চায়! সেই জন্যই খানিক দূর গিয়েই তাদের বসে পড়তে হয়। সমস্ত মহৎ চেষ্টা থেকে মেয়েদের দুরে রেখেছি বলেই আমাদের দেশের কাজে প্রাণসঞ্চার হচ্ছে না। আমাদের হৃদয়, আমাদের কাজ, আমাদের আশা বাইরে ও অন্তঃপুরে খণ্ডিত। সেই জন্যে আমরা বাইরে গিয়ে বক্তৃতা দিই ঘরে এসে ভুলি! দেখ অবলাকান্ত বাবু এখনো তোমার বয়স অল্প আছে, এই কথাটি ভাল করে মনে রেখো―স্ত্রীজাতিকে অবহেলা কোরো না। স্ত্রীজাতিকে যদি আমরা নীচু করে রাখি তাহলে তাঁরাও আমাদের নীচের দিকেই আকর্ষণ করেন; তা হলে তাঁদের ভারে আমাদের উন্নতির পথে চলা অসাধ্য হয়―দুপা চলেই আবার ঘরের কোণে এসেই আবদ্ধ হয়ে পড়ি। তাঁদের যদি আমরা উচ্চে রাখি, তাহলে ঘরের মধ্যে এসে নিজের আদর্শকে খর্ব্ব করতে লজ্জাবোধ হয়। আমাদের দেশে বাইরে লজ্জা আছে কিন্তু ঘরের মধ্যে সেই লজ্জাটি নেই, সেই জন্যেই আমাদের সমস্তউন্নতি কেবল বাহ্যাড়ম্বরে পরিণত হয়।

 শৈল চন্দ্রবাবুর এই কথাগুলি আনত মস্তকে শুনিল―কহিল,