পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NO প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ বড়ো প্ৰবন্ধ লিখতে হয়। কিন্তু চুটকি যে কি পদাৰ্থ, তা যে আমরা সকলেই জানি, তার প্রমাণ হাতে-হাতেই দেওয়া যায়। শ্রীষন্ত যোগেশচন্দ্র রায় মহাশয়ের অভিভাষণ যে চুটকি নয়, এ কথা স্বয়ং শাস্ত্ৰীমহাশয়ও সম্ববীকার করতে বাধ্য। কেননা এ কথা নিতয়ে বলা যেতে পারে। যে, ভাবে ও ভাষায় এর চাইতে ভারী অঙ্গের গদ্যবন্ধ জমানির বাইরে পাওয়া দািকর। হীরেন্দ্রবাবর অভিভাষণও চটকি নয়। তবে শাস্ত্ৰীমহাশয় এ মতে সায় দেবেন। কি না জানি নে। কেননা হীরেন্দ্রবাবর প্রবন্ধ একে সংক্ষিপািত, তার উপর আবার সহজবোধ্য, অর্থাৎ সকল দেশের সকল যাগের সকল দার্শনিক তত্ত্ব যে পরিমাণে বোঝা যায়, হীরেন্দ্রবাবর দার্শনিক তত্ত্বও ঠিক সেই পরিমাণে বোঝা যায়, তার কমও নয় বেশিও নয়। শাস্ত্রীমহাশয়ের মতে, যে কাব্য মহাকায় তাই হচেছ মহাকাব্য। গজমাপে যদি সাহিত্যের মর্যাদা নির্ণয় করতে হয়, তা হলে হীরেন্দ্রবাবর রচনা অবশ্য চটকি। কেননা, তার ওজন যতই হোক-না কেন, তার আকার ছোটাে। অপর পক্ষে শাস্ত্ৰীমহাশয়ের অভিভাষণযগল যে চটকি-অঙ্গের, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। শাস্ত্ৰীমহাশয়ের নিজের কথা এই-- একখানা বই পড়িলাম, অমনি আমার মনের ভাব আমলে পরিবর্তন হইয়া গেল, যতদিন বাঁচিব ততদিন সেই বইয়ের কথাই মনে পড়িবে, এবং সেই আনন্দেই বিভোর হইয়া থাকিব। এরকম যাতে হয় না, তারই নাম চটকি। এ কথা যদি সত্য হয়, তা হলে জিজ্ঞাসা করি, বাংলায় এরকম ক'জন পাঠক আছেন যাঁরা বকে হাত দিয়ে বলতে পারেন যে, শাস্ত্ৰীমহাশয়ের প্রবন্ধ পড়ে তাঁদের ভিতরটা সব ওলট-পালট হয়ে গেছে ? শাস্ত্রীমহাশয় বাংলা সাহিত্যে চটকির চেয়ে কিছ বড়ো জিনিস চান। বড়ো বইয়ের যদি ধৰ্মই এই হয় যে, তা পড়বামাত্র আমাদের মনের ভাবের আমলে পরিবতন হয়ে যাবে, তা হলে সেরকম বই যত কম লেখা হয় ততই ভালো। কারণ দিনে একবার করে যদি পাঠকের অন্তরাত্মার আমলে পরিবতন ঘটে, তা হলে বড়ো বই লেখবার লোক যেমন বাড়বে, পড়বার লোকও তেমনি কমে আসবে। তিনি চটকির সম্পবন্ধে যে দটি ভালো কথা বলেন নি, তা নয়; কিন্তু সে অতি মািরবিয়ানা করে। ইংরেজেরা বলেন, সবলপস্তুতির অর্থ অতিনিন্দা। সতরাং আত্মরক্ষার্থ চুটকি সম্পবন্ধে তাঁর মতামত আমাদের পক্ষে একটি যাচিয়ে দেখা দরকার। তিনি ܓܚGIG)ܐ চটকির একটি দোষ আছে, যখনকার তখনই, বেশি দিন থাকে না। এ কথা যে ঠিক নয় তা তাঁর উন্তি থেকেই প্রমাণ করা যায়। সংস্কৃত অভিধানে চুটকি শব্দ নেই, কিন্তু ও বস্তু যে সংস্কৃত সাহিত্যে আছে সে কথা শাস্ত্রীমহাশয়ই আমাদের বলে দিয়েছেন। তাঁর মতে কালিদাস ও ভবভতির পর চটকি আরম্ভ হইয়াছিল, কেননা শতক দশক অ্যািটক সম্প্ৰতশতী এই-সব তো চটকি-সংগ্রহ ছাড়া কিছুই নয়।