পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ ܓ ܬ পক্ষে পলিটিকর হতে পারে, কিন্তু রচিকর হবে না। সরকােরমহাশয় বলেন যে, এ দেশের ইতিহাসের সত্য যতই অপ্রিয় হোক বাঙালিকে তা বলতেও হবে শনাতেও হবে। অপর পক্ষে শাস্ত্ৰীমহাশয়ের উদ্দেশ্য তাঁর রচনা লোকের মাখরোচক করা, এবং সেই উদ্দেশ্য সাধন করবার জন্য তিনি নানারকম সত্য ও কলপনা একসঙ্গে মিলিয়ে ঐতিহাসিক সাড়ে-বাল্লিশ-ভাজার সন্টি করেছেন। ফলে এ রচনায় যে মাল আছে, তাও মসলা থেকে পথক করে নেওয়া যায় না। শাস্ত্ৰীমহাশয়ের কথিত বাংলার পরাবত্তের কোনো ভিত্তি আছে কি না বলা কঠিন। তবে এ ইতিহাসের যে গোড়াপত্তন করা হয় নি, সে বিষয়ে আর দ্বিমত নেই। ইতিহাসের ছবি আকিতে হলে প্রথমে ভূগোলের জমি করতে হয়। কোনো একটি দেশের সীমার মধ্যে কালকে আবদ্ধ না করতে পারলে সে কালের পরিচয় দেওয়া যায় না। অসীম |াশের জিয়োগ্রাফি নেই, অনন্ত কালেরও হিস্টরি নেই। কিন্তু শাস্ত্ৰীমহাশয় সেকালের বাঙালির পরিচয় দিতে গিয়ে সেকালের বাংলার পরিচয় দেন নি ; ফলে গৌরবটা উত্তরাধিকারীস্বত্বে আমাদের কি অপরের প্রাপ্য, এ বিষয়েও সন্দেহ থেকে যায়। শাস্ত্ৰীমহাশয়ের শাস্তু হাতে পড়ে দেখতে পাচিছ অঙ্গ ভয়ে বঙ্গের ভিতর সেধিয়েছে। কেননা যে "হস্তায় বেদ’ আমাদের সব প্রথম গৌরব, সে শাস্ত্র অঙ্গরাজ্যে রচিত হয়েছিল। বাংলার লম্বাচোঁড়া অতীতের গণবণনা করতে হলে বাংলাদেশটাকেও একটি লম্ববাচৌড়া করে নিতে হয়। সম্পভবত সেইজন্য শাস্ত্রীমহাশয় আমাদের পােব পরিষদের হয়ে অঙ্গকেও বেদখল করে বসেছেন। তাই যদি হয়, তা হলে বরেন্দ্রভূমিকে ছোটে দেওয়া হল কেন ? শানতে পাই, বাংলার অসংখ্য প্রত্নরাশি বরেন্দ্রভূমি নিজের বকের ভিতর লকিয়ে রেখেছে। বাংলার পাব গৌরবের পরিচয় দিতে গিয়ে বাংলার যে-ভূমি সবচেয়ে প্রত্নগভা, সে প্রদেশের নাম পর্যন্ত উল্লেখ না করবার কারণ কি ? যদি এই হয় যে, পাবে উত্তরবঙ্গের আদৌ কোনো অস্তিত্ব ছিল না, এবং থাকলেও সে দেশ বঙ্গের বাঁহভূত ছিল, তা হলে সে কথাটাও বলে দেওয়া উচিত। নচেৎ বরেন্দ্র-অন-সন্ধান-সমিতি আমাদের মনে একটা ভুল ধারণা এমনি বদ্ধমলে করে দেবে যে, তার ‘আমলে পরিবর্তন’ কোনো চটকি ইতিহাসের দ্বারা সাধিত হবে না। শাস্ত্ৰীমহাশয় যে তাম্রশাসনে শাসিত নন, তার প্রমাণ তিনি পাতায় পাতায় বলেন ‘আমি বলি’ ‘আমার মতে এই সত্য। এর থেকেই প্রমাণ পাওয়া যায় যে, শাস্ত্ৰীমহাশয়ের ইতিহাস বস্তুতন্ত্রতার ধার ধারে না, অর্থাৎ এক কথায় তা কাব্য; এবং যখন তা কাব্য তখন তা যে চটকি হবে, তাতে আর আশচযা কি। শাস্ত্ৰীমহাশয়ের, দেখতে পাই আর-একটি এই অভ্যাস আছে যে, তিনি নামের সাদ্দশ্য থেকে পথক পথক বস্তু এবং ব্যক্তির ঐক্য প্রমাণ করেন। একীকরণের এ পদ্ধতি অবশ্য বৈজ্ঞানিক নয়। কৃষ্ঠািট এবং খাস্ট, এ-দটি নামের যথেস্ট সাব্দশ্য থাকলেও ও-দটি অবতারের প্রভেদ শােধ বর্ণগত নয়, বগগতও বটে। কিন্তু শাস্ত্ৰীমহাশয়ের অবলম্পিাবত পদ্ধতির এই একটি মহাগণ যে, ঐ উপায়ে অনেক পরবর্তগৌরব আমাদের হাতে আসে, যা বৈজ্ঞানিক হিসাবে ন্যায়তা অপরের প্রাপ্য। কিন্তু উক্ত উপায়ে অতীতকে হস্তান্তর করার ভিতর বিপদও আছে। এক দিকে