পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ଈ ୯୬ প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ খেলা করবার জন্য সাহিত্যজগতে প্রবেশ করি, তা হলে নিবিবাদে সে জগতের রাজা রাজড়ার দলে মিশে যাব। কোনোরপে উচ্চ আশা নিয়ে সে ক্ষেত্রে উপস্থিত হলেই নিম্পািনশ্রেণীতে পড়ে যেতে হবে। ܔ লেখকেরাও অবশ্য দশের কাছে হাততালির প্রত্যাশা রাখেন, বাহবা না পেলে মনঃক্ষম হন। কেননা তাঁরাই হচেছন যথার্থ সামাজিক জীব, বাদবাকি সকলে কেবলমাত্র পারিবারিক। বিশবিমানবের মনের সঙ্গে নিত্যনতেন সম্প্ৰবন্ধ পাতানোই হচেছ কবি-মনের নিত্যনৈমিত্তিক কম। এমন-কি, কবির আপন মনের গোপন কথাটিও গীতিকবিতাতে রঙ্গভূমির স্বগতোন্তিস্বরপেই উচ্চারিত হয়, যাতে করে সেই মম কথা হাজার লোকের কানের ভিতর দিয়ে মরমে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু উচচমচে আরোহণ করে উচ্চৈঃস্বরে উচচবাচ্য না করলে যে জনসাধারণের নাযান-মন আকষণ করা যায় না, এমন কোনো কথা নেই। সাহিত্যজগতে যাঁদের খেলা করবার প্রবত্ত আছে, সাহস আছে ও ক্ষমতা আছে, মানষের নয়ন-মন আকর্ষণ করবার সংযোগ বিশেষ করে তাঁদের কপালেই ঘটে। মানষে যে খেলা দেখতে ভালোবাসে তার পরিচয় তো আমরা এই জড় সমাজেও নিত্যই পাই। টাউনহলে বক্তৃতা শনতেই বা ক'জন যায়। আর গড়ের মাঠে ফটবল খেলা দেখতেই বা ক'জন যায়। অথচ এ কথাও সত্য যে, টাউনহলের বক্ততার উদ্দেশ্য অতি মহৎ- ভারত-উদ্ধার, আর গড়ের মাঠের খেলোয়াড়দের ছাটোছটি দৌড়াদৌড়ি আগাগোড়া অর্থশান্য এবং উদ্দেশ্যবিহীন। আসল কথা এই যে, মানষের দেহমানের সকলপ্রকার ক্লিয়ার মধ্যে ক্ৰীড়া শ্রেণীঠ, কেননা তা উদ্দেশ্যহীন। মানষে যখন খেলা করে, তখন সে এক আনন্দ ব্যতীত অপর কোনো ফলের আকাঙক্ষা রাখে না। যে খেলার ভিতরে আনন্দ নেই কিন্তু উপরিপাওনার আশা আছে, তার নাম খেলা নয়, জয়াখেলা। ও ব্যাপার সাহিত্যে চলৈ না, কেননা ধর্মত জয়াখেলা লক্ষীপজার অঙ্গ, সরস্বতীপজার নয়। এবং যেহেতু খেলার আনন্দ নিরর্থক অর্থাৎ অর্থগত নয়, সে কারণ তা কারো নিজস্ব হতে পারে না ; এ আনন্দে সকলেরই অধিকার সমান । সতরাং সাহিত্যে খেলা করবার অধিকার যে আমাদের আছে, শােধ, তাই নয়, সবাৰ্থ এবং পরার্থ এ দায়ের যােগপৎ সাধনের জন্য মনোজগতে খেলা করাই হচেছ আমাদের পক্ষে সব প্রধান কতব্য। যে লেখক সাহিত্যক্ষেত্রে ফলের চাষ করতে ব্ৰতী হন, যিনি কোনোরাপ কাৰ্য-উদ্ধারের অভিপ্ৰায়ে লেখনী ধারণ করেন, তিনি গীতের মম ও বোঝেন না, গীতার ধ্যম ও বোঝেন না। কেননা খেলা হচেছ জীবজগতে একমাত্র নিল কাম কম, অতএব মোক্ষলাভের একমাত্র উপায়। সদ্বয়ং ভগবান বলেছেন, যােদঢ তাঁর কোনোই অভাব নেই। তবও তিনি এই বিশব সজেন করেছেন, অর্থাৎ সম্মিট তাঁর লীলামাত্র। কবির সন্টিও এই বিশ্ববাসটির অন্যরােপ, সে সািজনের মলে কোনো অভাব দরি করবার অভিপ্রায় নেই- সে সন্টির মািল অন্তরাত্মার সফতি এবং তার ফলে আনন্দ। এক কথায় সাহিত্যািসটি জীবাত্মার লীলামাত্র, এবং সে লীলা বিশাবলীলার অন্তর্ভূত; কেননা জীবাত্মা পরমাত্মার অঙ্গ এবং অংশ।