পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্যে খেলা SC O সাহিত্যের উদ্দেশ্য সকলকে আনন্দ দেওয়া, কারো মনোরঞ্জন করা নয়। এ দায়ের ভিতর যে আকাশ-পাতাল প্ৰভেদ আছে, সেইটি ভালে গেলেই লেখকেরা নিজে খেলা না করে পরের জন্যে খেলনা তৈরি করতে বসেন। সমাজের মনোরঞ্জন করতে গেলে সুহিত্য যে স্বধৰ্ম চুত হয়ে পড়ে, তার প্রমাণ বাংলাদেশে আজ দলেভ নয়। কাব্যের ঝােমঝমি, বিজ্ঞানের চুষিকাঠি, দর্শনের বেলন, রাজনীতির রাঙা লাঠি, ইতিহাসের ন্যাকড়ার পাতুল, নীতির টিনের ভোপা এবং ধমের জয়ঢাক- এই-সব জিনিসে সাহিত্যের বাজার ছেয়ে গেছে। সাহিত্যরাজ্যে খেলনা পেয়ে পাঠকের মনস্তুটি হতে পারে, কিন্তু তা গড়ে লেখকের মনস্তুটি হতে পারে না। কারণ পাঠকসমাজ যে-খেলনা আজ আদর করে, কাল সেটিকে ভেঙে ফেলে- সে প্রাচ্যই হোক আর পাশ্চাত্যই হোক, কাশীরই হোক আর জমানিরই হোক, দদিন ধরে তা কারো মনোরঞ্জন করতে পারে না। আমি জানি যে, পাঠকসমাজকে আনন্দ দিতে গেলে তাঁরা প্রায়শই বেদনাবোধ করে থাকেন। কিন্তু এতে ভয় পাবার কিছই নেই; কেননা কাব্যজগতে যার নাম আনন্দ, তারই নাম বেদনা। সে যাই হোক, পরের মনোরঞ্জন করতে গেলে সরস্বতীর বরপত্রেও যে নাটবিটের দলভুক্ত হয়ে পড়েন তার জাজবল্যমান প্রমাণ স্বয়ং ভারতচন্দ্র। কৃষ্ণচন্দ্রের মনোরঞ্জন করতে বাধ্য না হলে তিনি বিদ্যাসন্দর রচনা করতেন না, কিন্তু তাঁর হাতে বিদ্যা ও সন্দরের অপবর্ণ মিলন সংঘটিত হত; কেননা knowledge এবং art উভয়ই তাঁর সম্পণ করায়ত্ত ছিল। বিদ্যাসন্দর খেলনা হলেও রাজার বিলাসভবনের পাণ্ডালিকা- সবর্ণে গঠিত, সংগঠিত এবং মণিমন্তোয় অলংকৃত। তাই আজও তার যথেষ্ট মাল্য আছে, অন্তত জহরীর কাছে। অপর পক্ষে এ যাগে পাঠক হচ্ছে জনসাধারণ, সতরাং তাঁদের মনোরঞ্জন করতে হলে আমাদের অতি সসীতা খেলনা গড়তে হবে, নইলে তা বাজারে কাটবে না। এবং সসীতা করার অর্থ খেলো করা। বৈশ্য লেখকের পক্ষেই শদ্র পাঠকের মনোরঞ্জন করা সংগত। অতএব সাহিত্যে আর যাই করা-না-কেন, পাঠকসমাজের মনোরঞ্জন করবার চোটা কোরো না। S তবে কি সাহিত্যের উদ্দেশ্য লোককে শিক্ষা দেওয়া ?- অবশ্য নয়। কেননা কবির মতিগতি শিক্ষকের মতিগতির সম্পণে বিপরীত। স্কুল না বন্ধ হলে যে খেলার সময় আসে না, এ তো সকলেরই জানা কথা। কিন্তু সাহিত্যরচনা যে আত্মার লীলা, এ কথা শিক্ষকেরা স্বীকার করতে প্ৰস্তুত নন। সতরাং শিক্ষা ও সাহিত্যের ধম কম যে এক নয়, এ সত্যটি একটি স্পষ্ট করে দেখিয়ে দেওয়া আবশ্যক। প্রথমত শিক্ষা হচ্ছে সেই বস্তু যা লোকে নিতান্ত অনিচ্ছাসত্ত্বেও গলাধঃকরণ করতে বাধ্য হয়, অপর পক্ষে কাব্যরস লোকে শািন্ধ স্বেচ্ছায় নয়। সানন্দে পান করে ; কেননা শাস্ত্ৰমতে সে রস অমত। দ্বিতীয়ত শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে মানষের মনকে বিশোবর