পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলার ভবিষ্যৎ মিজাপাের ফিনিক্স ইউনিয়ন লাইব্রেরিতে পঠিত বঙ্কিমচন্দ্র যখন প্রথম বঙ্গদর্শন প্রকাশ করেন তখন তিনি বাঙালির পক্ষে বাংলা লেখার ঔচিত্য এবং সার্থকতা সম্পবন্ধে একটি দীঘ বক্তৃতা করতে বাধ্য হন। বঙ্গদর্শনের “পত্র সচনা’ বঙ্গসরস্বতীর তরফ থেকে একাধারে আরজি, জবাব ও সওয়ালজবাব। বাংলা লেখার জন্য বাঙালির পক্ষে সর্বদেশী শিক্ষিতসমাজের নিকট কোনোরাপ কৈফিয়ত দেওয়ার প্রয়োজন যে একদিন ছিল, এ ব্যাপার আজকের দিনে আমাদের কাছে বড়োই অদ্ভুত ঠেকে যতদিন না। সশিক্ষিত জ্ঞানবন্ত বাঙ্গালিরা বাঙ্গালাভাষায় আপন উক্তিসকল বিন্যস্ত করিবেন, ততদিন বাঙ্গালির উন্নতির কোন সম্ভাবনা নাই। বঙ্কিমের এ উক্তির সত্যতা যে যক্তিতকের অপেক্ষা রাখে, এ আমাদের ধারণার বহিভূত। কেননা এ সত্য আমাদের কাছে স্বতঃসিদ্ধ হয়ে না। উঠলেও স্বীকার্য হয়েছে; কিন্তু বঙ্কিম যে সময়ে লেখনীধারণ করেন, সে সময়ে এ সত্যকে মেনে নেওয়া দরে থাক, কেউ ধরে নিতেও প্রস্তুত ছিলেন না। সে যাগে ছিল ইংরেজির রেওয়াজ এবং ইংরেজিরই প্রতিপত্তি। সেকালের শিক্ষিতসম্প্রদায়, অর্থাৎ ইংরেজিশিক্ষিত সম্প্রদায়, ইংরেজি লিখতেন, ইংরেজি ছাড়া আর-কিছ লিখতেনও না, এবং সম্পভবত কথাবাতাও কইতেন। ঐ রাজভাষাতেই। নতুবা বণ্ডিকমের এ কথা বলবার কোনো আবশ্যকতা ছিল না যে— ইংরাজি লেখক, ইংরাজি বাচক সম্প্রদায় হইতে নকল ইংরাজ ভিন্ন কখন খাঁটি বাঙ্গালির সমন্দভবের সম্ভাবনা নাই। ܓ এ খাব বেশি দিনের কথা নয়। বঙ্কিমচন্দ্রের এ লেখার তারিখ হচেছ পয়লা বৈশাখ, ১২৭৯ সােল। জাতীয় জীবনের হিসাবে পািয়তাল্লিশ বৎসর অতি স্বল্প কাল, কিন্তু এই স্বল্প কালের মধ্যেই বাংলার শিক্ষিতসম্প্রদায়ের মনে মাতৃভাষা সম্পবন্ধে একটা বিশেষ ভাবান্তর ঘটেছে, বাংলা ভাষার প্রতি অভক্তি স্পষ্টত অতিভক্তিতে পরিণত হয়েছে। আমাদের মধ্যে বাংলা লেখার প্রবত্তি বৰ্তমানে যে কতটা অদম্য হয়ে উঠেছে, তার পরিচয় আমাদের মাসিক সাহিতেই পাওয়া যায়। যে দেশে পািয়তাল্লিশ বৎসর পর্বে একখানি মাসিক পত্র বার করতে হলে বঙ্কিমচন্দ্রের ন্যায় অসাধারণ লেখকেরও জবাবদিহি ছিল, সেই দেশে আজকের দিনে নিত্য নািতন