পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৩৬

N9 RV প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ মাসিক পত্রের জন্ম ও মাতৃত্যু হচ্ছে, অথচ তার জন্য আমাদের সাধারণ লেখকদেরও কারো কাছে কোনোরাপ কৈফিয়ত দিতে হয় না। এই কলিকাতা শহর থেকে মাসে কেননা এ ক্ষেত্রে জন্মমােত্যুর কোনো সঠিক রেজেসন্টারি রাখা হয় না। যদিচ এখন কাগজের আকাল পড়েছে, তথাপি বাজারে নন্তন কাগজের কোনো অভাব নেই। তার পর বাংলার পােব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণের নানা নগরী ও উপনগরী থেকে নানা আকারের নানা বর্ণের নানা পত্র পরপর রেষারেষি করে শান্যমাগে উদ্ভীন হয়ে সাহিত্যগগনের শোভা বদ্ধি করছে। বৎগসরস্বতীকে ঢাকা দান করেছে ‘প্রতিভা, মৈমনসিং “সৌরভ, বহরমপত্র ‘উপাসনা’, এবং কুচবেহাের “পরিচারিকা’। এক কথায়, এ বিষয়ে অনন্ঠানের ত্রটি বাংলাদেশের কোনো অঞ্চলেই দেখা যায় না। শােধ তাই নয়, নব- বঙ্গ সাহিত্য বওগদেশের সীমা অতিক্রম করে অঙ্গ ও কলিঙ্গ দেশেও স্বীয় প্রসার লাভ ও প্রভাব বিস্তার করছে। তা ছাড়া এমন কথাও শািনতে পাই যে, গজরাটি মারাঠি হিন্দি প্রভাতি হাল সাহিত্যের প্রধান সম্পবল হচেছ বাংলা বইয়ের ভাষায় অন্যবাদ। এক হিসেবে এটি একটি আশ্চৰ্য্য ঘটনা, কেননা এ যাগে এ দেশে ইংরেজির চর্চা কমা দরে থাক, এতটা বেড়ে গিয়েছে যে, ইংরেজি ভাষাকে এখন বাঙালির দিবমাতৃভাষা বলা যেতে পারে, যদি না বৈয়াকরণিকেরা মাতৃ-শব্দের ঐরােপ দিবত্বে আপত্তি করেন। বঙ্কিমচন্দ্রের যাগে ইংরেজিশিক্ষিত বাঙালি হাতে গোনা যেত, আর আজকের দিনে তাঁদের সংখ্যার সন্ধান নিতে হলে সরকারবাহাদরের আদমসামারির খাতার অনেক পাতা ওলটাতে হয়। সেকালেব শিক্ষিতসম্প্রদায়, বণ্ডিকমচন্দ্রের ভাষায় যাকে বলে ইংরাজি-বাচক, তাই ছিলেন কি না জানি নে, কিন্তু এ কথা আমরা সবাই জানি যে, উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে এ দেশে এক নবসম্প্রদায়ের আবিভােব হয়, যে সম্প্রদায় বাংলা কথা ভালেও মাখে আনতেন না, এমন-কি, ঘরেও নয়। সেই ইঙ্গিব্যঙ্গসম্প্রদায়ের লোকেরাও যে আজ বাংলা বলেন, বাংলা লেখেন, এমন-কি, প্রকাশ্য সভাসমিতিতে খাঁটি বাংলায় বক্ততা পর্যন্ত করতে পিছপাও হন না, তার পরিচয় লাভ করবার জন্য আপনাদের অন্যত্র যেতে হবে না। আমার এ কথার সত্যতা সম্পবন্ধে উপস্থিত শ্রোতৃমন্ডলীর চক্ষকণের বিবাদ ঘটবার কোনোই সম্পভাবনা নেই। বঙ্গ সাহিত্যের পক্ষে এ-সব অবশ্য খবই শলাঘার বিষয়। কিন্তু আমাদের সাহিত্যের দেহপলিটর এই-সব প্রত্যক্ষ লক্ষণ দেখে যদি কেউ মনে করেন যে, ‘বাংলা বনাম ইংরেজি’ এই ভাষার মামলায় বাদীর পক্ষে পরোপরি জয়লাভ হয়েছে, তা হলে তিনি নিতান্তই ভাল করবেন ; যা হয়েছে তা হচেছ তিরমিম ডিকি। ও দিকে একটি দক্ষিটপাত করলে সকলেই দেখতে পাবেন যে, আমাদের আইন-আদালত স্কুল-কলেজ রাজদরবার-রাজনীতি জ্ঞান-বিজ্ঞান সবই অদ্যাবধি ইংরেজির পরো