পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SO8 প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ অন্টাদশতত্ত্ব রচনা করে রঘানন্দন বাঙালি জাতির উপকার কি অপকার করেছেন সে বিষয়েও যথেস্ট মতভেদের অবসর আছে। কিন্তু এই-সকল গ্ৰন্থই প্রমাণ যে, নবাবি আমলেও বাঙালি জাতির বন্ধিবত্তি একেবারে ঘামিয়ে পড়ে নি, এবং বাঙালি সমাজতত্ত্ব ও জ্ঞানতত্ত্ব সম্পবন্ধে চিন্তা করতে বিচার করতে কখনোই ক্ষান্ত হয় নি। কিন্তু সে যাগে আমাদের জ্ঞান ও চিন্তার একমাত্র বাহন ছিল সংস্কৃত ভাষা, যেমন মধ্যযাগে ইউরোপের ছিল ল্যাটিন। সেকালে বদ্ধিবিদ্যার বিষয়ের উপর হস্তক্ষেপ করবার লোকভাষার কোনোই অধিকার ছিল না। সতরাং ইংরেজ আসার পবে এ দেশে বাংলা ছিল, মধ্যযাগের ইউরোপে যাকে বলত একটি vulgar tongue, অৰ্থাৎ ইতর ভাষা। ইংরেজি আমলে বাংলা সাহিত্যের যথেস্ট শ্রীবদ্ধি হয়েছে, কিন্তু আমাদের দশনবিজ্ঞানের বাহন আজ সংস্কৃতের পরিবতে ইংরেজি হয়েছে। কথাটা যে সত্য তার প্রমাণস্বরপ দ-একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। সারা জগদীশচন্দ্র বস, ডাক্তার প্ৰফল্লচন্দ্র রায় এবং ডান্তার ব্রজেন্দ্রনাথ শীল প্রভৃতি দেশপজ্য মনীষিগণ তাঁদের বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক গ্রন্থসকল ইংরেজি ভাষাতেই রচনা করেন। অর্থাৎ লাইবনিৎসের যাগে জমানভাষার যে অবস্থা ছিল, আজ এই বিংশ শতাব্দীতে বাংলাভাষা ঠিক সেই অবস্থাতেই আছে। সাহিত্যের স্কুলে আজও তা প্রমোশন পায় নি, তার ইত্যরতার কােলণ্ডক আজও ঘোচে নি। ܬ বলা বাহাল্য, বঙ্গ সাহিত্য যতদিন কেবলমাত্র গল্প ও গানের গন্ডির ভিতর আটক থাকবে, ততদিন শিক্ষিতসমাজে বঙ্গ ভাষা যথাৰ্থ প্ৰতিজ্ঞতা লাভ করতে পারবে না। কেননা শ্রেষ্ঠ কাব্য সাহিত্যের মকুটমণি হলেও সস্তা কথা ও গাথা নিতান্তই অকিঞ্চিৎকর পদার্থ। নিকৃভট কাব্যসাহিত্যের পরিমাণ বদ্ধি হওয়ার্তে কোনো সাহিত্যেরই গৌরব বদ্ধি হয় না, এবং অক্ষম হস্তের অযত্নপ্রসন্ত গান ও গল্প প্রায়ই উৎকৃষ্ট হয় না ; কেননা যথাৰ্থ কাব্যসান্টির জন্য চাই স্রম্পটার প্রাক্তন সংস্কার এবং অসামান্য প্রতিভা। এবং সকলেই অবগত আছেন যে, প্ৰতিভাশালী লেখক এবেলা-ওবেলা হাটে-বাজারে মেলে না। হালে বঙ্গ সাহিত্যের একটি নতন চাল দেখে আমি ঈষৎ ভীত হয়ে পড়েছি। সম্প্রতি আমাদের সাহিত্যে রসমাহাত্ম্যকীতন ও রসতত্ত্ববিচারের বেজায় ধর্ম পড়ে গিয়েছে। এতে অবশ্য ভয়ের কোনো কারণ থাকত না, যদি না সাহিত্যে রসের লোভে তার সারের দিকটা উপেক্ষা করবার একটা সম্ভাবনা এসে পড়ত। কদলীবক্ষের অন্তরে সার নেই, আছে কেবল রস ; সে কারণ আমরা যদি বঙ্গ সাহিত্যে সেই নিটােল সগোল মস্যােণ চিক্কণ নধর সরস বক্ষের চাষের প্রশ্রয় দিই, তা হলে বঙ্গসরস্বতীর কপালে নিশ্চয়ই শােধ কদলীভক্ষণই লেখা আছে। এ স্থলে আমি সকলকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, ভাষার উৎপত্তি কমে আর তার পরিণতি জ্ঞানে। ভাষা ব্যতীত ম্যানষের চিন্তা প্রকাশ করবার অপর কোনো উপায় নেই। অপর পক্ষে আমরা যাকে বলি রস, আর ইংরেজরা ইমোশন,