পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কোনো-একটি সাহিত্যসভায় পড়া হবে বলে লিখিত আপনাদের সেক্রেটারি মহাশয় আমাকে আপনাদের সমখে উপস্থিত হয়ে দ-চার কথা বলবার জন্যে বহদিন ধরে অনরোধ করে আসছেন। কতকটা অবসরের অভাবের দরুন, কতকটা আলস্যবশত সে অন রোধ আমি এতদিন রক্ষা করতে পারি নি। তিনি যে বিষয়ে আমাকে বলতে অনরোধ করেন, সে বিষয়ে ভালো করে কিছ বলবার জন্য আগে থেকে প্রস্তুত হওয়া দরকার, এবং তার জন্য কতকটা অবসরও চাই, কতকটা পরিশ্রমও চাই। রামমোহন রায় সম্পবন্ধে যেমন-তেমন করে যা-হোক একটা প্ৰবন্ধ গড়ে তুলতে আমার নিতান্ত অপ্রবত্তি হয়। যে ব্যক্তিকে আমি এ যাগের অদ্বিতীয় মহাপরিষ বলে মনে করি, তাঁকে মৎফরাক্কা রকম একটা সার্টিফিকেট দিতে উদ্যত হওয়াটা আমার মতে ধন্টতার চরম সীমা। শেষটা আপনাদের সেক্রেটারি মহাশয় যখন আমাকে কথোপকথনচছলে এই মহাপরিষের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবার অনমতি দিলেন, তখন আমি তাঁর উপরোধ এড়িয়ে যাবার কোনো পথ দেখতে পেলাম না। কিছদিন পাবে প্রবাসী পত্রিকা। এ যাগের বাংলাদেশের সবচাইতে বড়ো লোক কে, পাঠকদের কাছ থেকে এই প্রশেনর জবাব চেয়েছিল। পাঠকদের ভোটে স্থির হয়ে গেল যে, সে ব্যক্তি রাজা রামমোহন রায়। দেশের লোক যে এ সত্য আবিস্কার করেছে, এ দেখে আমি মহা খশি হলাম। কিন্তু সেইসঙ্গে আমার মনে একটি প্রশনও জেগে উঠল। রামমোহন রায় যে বাংলার, শােধ বাংলার নয়, বর্তমান ভারতবর্ষের অদ্বিতীয় মহাপরিষ, এ সত্য বাঙালি কি উপায়ে আবিস্কার করলে ? রামমোহন রায়ের লেখার সঙ্গে চাক্ষষ পরিচয় আছে এমন লোক আমার পরিচিতের মধ্যে একান্ত বিরল, অথচ এদের মধ্যে অধিকাংশই হচেছন যথোচিত সাঁশিক্ষিত এবং দস্তুরমত স্বদেশভক্ত। লোকসমাজে অনেকেরই বিশবাস যে, রামমোহন রায় বাংলা গদ্যের সন্টি করেছেন। তিনি বাংলার সর্বপ্রথম গদ্যলেখক কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ আছে; কিন্তু যে বিষয়ে বিন্দমাত্র সন্দেহ নেই তা এই যে, তিনি হচেছন। বাংলা গদ্যের প্রথম লেখকদের মধ্যে সব প্রধান লেখক। অথচ তাঁর লেখার সঙ্গে বাংলা লেখকদেরও পরিচয় এত কম যে, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ এ কথা লিখতেও কুঠিত হন না যে, রামমোহন রায় ইংরেজি গদ্যের অন্যাকরণে বাংলা গদ্য রচনা করেছিলেন। এর পর যদি কেউ বলেন যে, শংকরের গদ্য হাবাৰ্ট স্পেনসারের অনাকরণে রচিত হয়েছিল তাতে আশ্চর্য হবার কোনোই কারণ নেই।