পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Na NSVG ৯ লিবার্টি শব্দটা আজকের দিনে এত অসংখ্য লোকের মুখে মখে ফিরছে, এক কথায় এতটা বাজারে হয়ে উঠেছে যে, ভয় হয় যে, অধিকাংশ লোকের মাখে ওটা একটা বলি ছাড়া আর কিছই নয়। গীতার নিন্দকাম ধমের কথাটাকে আমরা যে একটা বলিতে পরিণত করেছি, এ কথা তো আর সজ্ঞানে অস্বীকার করা চলে না। যে কথা মাখে আছে মনে নেই, যদিও বা মনে থাকে তো জীবনে নেই, তারই নাম না। বলি ? অতএব এ স্থলে, বৰ্তমান ইউরোপ লিবার্টি শব্দের অর্থে কি বোঝে সে সম্পবন্ধে বর্তমান ইতালির একজন অগ্রগণ্য লেখকের কথা এখানে বাংলায় অন্যবাদ করে দিচিছ_

প্রাচীনকালে লিবাটি শব্দের অর্থে লোকে বুঝত শুধু দেশের গভর্নমেণ্টকে নিজের করায়ত্ত করা। বর্তমানে লোকে লিবাটি বলতে শািন্ধ রাজনৈতিক নয়, সেইসঙ্গে মানসিক ও নৈতিক স্বাধীনতার কথাও বোঝে, অর্থাৎ এ যুগে লিবার্টির অর্থ, চিন্তা করবার স্বাধীনতা, কথা বলবার স্বাধীনতা, লেখবার সবাধীনতা, নানা লোক একত্র হয়ে দল বাঁধবার স্বাধীনতা, বিচার করবার স্বাধীনতা, নিজের মত গড়বার এবং সে মত প্রকাশ করবার, প্রচার করবার স্বাধীনতা। মানষমাত্রেই এ-সকল ক্ষেত্রে সমান সবাধীনতার স্বভাবতই অধিকারী, এ স্বাধীনতা, কোনো চাচ্য (ধম সংঘ) কতৃকও দত্ত নয়, কোনো রাজশক্তি কর্তৃকও দত্ত নয়। এর উলটাে মত হচেছ এই যে, হয়। ধম সংঘ নয় রাজশক্তি সব শান্তিমান, অতএব ব্যক্তির ব্যক্তি হিসেবে কোনোই সবাধীনতা নেই। ব্যক্তিসত্বাতন্ত্র্য একটা জাতীয় সমহের অন্তরে লীন হয়ে লািপত হয়ে যায়, সে সমােহ রাজাই হোক আর রাজ্যই হোক, চাচাই হোক আর পোপাই হোক ।

লেখকের মতে, যে দেশে যে সমাজে ব্যক্তিমাত্রেই এই-সকল মানসিক নৈতিক ও আধ্যাত্মিক স্বাধীনতার অধিকারী নয়, সে দেশের লোকমাত্রেই দাস; সে দেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতা মিছা ও অর্থশান্য। আমি ইচ্ছা করেই De Sanctis এর মত আপনাদের কাছে নিবেদন করছি, কেননা উন্ত লেখককে ইতালির রাজনৈতিক স্বাধীনতা উদ্ধারের জন্য আজীবন অশেষ অত্যাচার, বিশেষ শাসিত ভোগ করতে হয়েছিল। রাজা রামমোহন রায় লিবাটি শব্দের এই নাতন অর্থই গ্রহণ করেছিলেন, এবং স্বজাতিকে মানসিক নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দাসত্ব হতে মন্তি দিতে বন্ধপরিকর হয়েছিলেন। লিবার্টির নাতন ধারণার ভিতর একটি দার্শনিক তত্ত্ব নিহিত আছে, সে তত্ত্ব এই যে, স্বাধীনতার মধ্যেই ব্যক্তিমাত্রেরই জীবনীশক্তি সাফতি লাভ করে। এবং বহা লোকের মনে ও জীবনে এই শক্তি সফত' হলেই জাতীয় জীবন যােগপৎ শক্তি ও উন্নতি লাভ করে। মানষেকে দাস রেখে মানবসমাজকে স্বাধীন করে তোলার যে কোনো অর্থ নেই। এ জ্ঞান রামমোহন রায়ের ছিল, কেননা তিনি হেগেল প্রমািখ জমান দার্শনিকদের শিষ্য ছিলেন না।