পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NERTENO5 ve FVG SN) মহাদেশের পরিমাণের তুলনা করলেই তাঁরা বঝতে পারবেন, কেন ইলিয়াডের মাপের সঙ্গে মহাভারতের মাপ মেলে না ও মিলতে পারে না। কিন্তু ভৌগোলিক হিসেব অনসারেই যে কাব্যের দেহ সংকুচিত ও প্রসারিত হতে হবে, এ কথা তাঁরা মানতে প্ৰস্তুত নন। তাঁরা বলেন, মানচিত্রের সঙ্গে মন-চিত্রের কোনেম কাৰ্যকারণ সম্পবন্ধ নেই। অতএব মহাভারত যখন কাব্য, তখন নৈসৰ্গিক নিয়মে তা এতাদশ মহাকায় হতে পারে না। কাব্যের কথা ছেড়ে দিলেও কাব্যরচয়িতা কবির তো দম বলে একটা জিনিস আছে। কোনো কবি এক দমে মহাভারতের অন্টাদশ পবেরি পাল্লা ছািটতে পারতেন না। এর থেকে অনামান করা যায় যে, মহাভারতের মধ্যে অধিকাংশ শেলাকই প্রক্ষিপত। এর উত্তর হচ্ছে, ইউরোপীয় পন্ডিতরা ঐ কাব্য-নামেই ভালেছেন। মহাভারত কাব্য নয়, মহাভারত হচ্ছে একটি এনসাইক্লোপিডিয়া; সতরাং এক লক্ষ শেলাকের অর্থাৎ দ্য লক্ষ ছত্রের বিশবকোষকে সংক্ষিপত বললে অাঁদ্রে জিদও কোনো আপত্তি করতে পারবেন না। এ গ্রন্থের নাম সংহিতা না হয়ে কাব্য কি করে হল, তার পরিচয় মহাভারতেই আছে। বেদব্যাসের মনে যখন এ গ্রন্থ জন্মগ্রহণ করে, তখন তিনি ব্ৰহ্মাকে বলেন যে, আমি মনে মনে একখানি কাব্য রচনা করেছি। সে কাব্যে কি কি জিনিস থাকবে, বেদব্যাসের মখে তার ফর্দ শানে স্বয়ং ব্ৰহ্মাও একটা চমকে ওঠেন ও থমকে যান। তার পর তিনি সসম্পন্দ্রমে বলেন যে, হে বেদব্যাস, তুমি যখন ও-গ্ৰন্থকে কাব্য বলতে চাও, তখন ওর নাম কাব্যই হবে, কেননা তুমি কখনো মিথ্যা কথা বল না। এর থেকেই দেখা যাচেছ যে, বর্তমান মহাভারতকে কাব্য বলা যায় কি না, সে বিষয়ে স্বয়ং ব্ৰহ্মারও সন্দেহ ছিল। কিন্তু তিনি যে ও-গ্ৰন্থকে অবশেষে কাব্য বলতে স্বীকৃত হয়েছিলেন, তার কারণ মহাভারত একাধারে কাব্য আর এনসাইক্লোপিডিয়া; এবং এই দই বস্তু একই গ্রন্থের অন্তভূত হলেও মিলেমিশে একদম একাকার হয়ে যায় নি, মোটামটি হিসেবে উভয়েই চিরকাল নিজ নিজ স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করে আসছে। মহাভারতের যে অংশ আমাদের মতো অবিদ্ধবান লোকেরা পড়ে এবং উপভোগ করে সেই অংশ তার কাব্যাংশ; আর যে অংশ বিম্ববান লোফেরা কািটভোগ করে পর্যালোচনা করেন, সেই অংশই তার এনসাইক্লোপিডিয়ার অংশ। এ বিষয়ে বোধ হয় অপন্ডিত মহলে কোনো মতভেদ নেই। মহাভারতের এই যািগলরাপের প্রহেলিকাই হচ্ছে ইউরোপীয় পান্ডিত্যের শান্তিভঙ্গের মািল কারণ। এ হেয়ালির যাহোক-একটা হেস্তনেস্ত না করতে পারলে পন্ডিতমশন্ডলী তাঁদের পন্ডিত মনের শালিত ফিরে পাবেন না। এর জন্য তাঁরা সকলে মিলে পান্ডিত্যের দাবাখেলা খেলতে শার করেছেন। এ খেলায় সকলেই সকলকে মাৎ করতে চান। আমি সে খেলার দশক হিসেবে দটি-একটি উপর-চাল দিচ্ছি। সে চাল নেওয়া না-নেওয়া নিভাির করছে খেলোয়াড়দের উপর। একটা চোখ চেয়ে দেখলেই দেখতে পাবেন যে, পণ্ডিতের দল ভারতবর্যের অতীতকেV প্রায় বেদখল করে নিয়েছে। বেদ এখন ফিললজির, ইতিহাস নিউমিস ম্যাটিক্সের এবং আট আরকিঅ’লজির অন্তর্ভূত হয়ে পড়েছে- অৰ্থাৎ একাধারে বিজ্ঞানের ও ইংরেজির। এ অবস্থায় মহাভারত যাতে বাংলা সাহিত্যের হাতছাড়া না হয়ে যায়,