পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহাভারত ও গীতা S bዖ4: ইহাই প্রতীত হয় যে, ভারতীয় যন্ধের বর্ণনা প্ৰথমে জয়” নামক গ্রন্থে করা হইয়াছিল, পরে সেই ঐতিহাসিক গ্রন্থের মধ্যেই অনেক উপাখ্যান সন্নিবেশিত হইয়া উহাই ইতিহাস ও ধম ধম বিচারেরও নিৰ্ণয়কারী এই এক বড় মহাভারতে পরিণত হইয়াছে। অর্থাৎ জয় ওরফে ভারত-কাব্য লািশত হয় নি, মহাভারতের অন্তরেই তা গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে। তাই যদি হয় তা হলে মহাভারতের মহত্ত্ব ও গরীত্বের চাপের ভিতর থেকে জয়ের ক্ষদ্র দেহ উদ্ধার করা অসম্পভব। ভারত যে লািশত হয় নি, এ বিষয়ে আমি মহাত্মা তিলকের মত শিরোধান্য করি, কারণ সে কাব্যের লক্ষত হবার কোনো কারণ নেই। সেকালে ছাপাখানা ছিল না, সব গ্ৰন্থই হাতে লিখতে হত, সতরাং উপযন্ত লেখকের অভাবে বড়ো ভারতেরই লিপিত হবার কথা, ছোটাে ভারতের নয়। সেকালে একটানা শত-সহস্ৰ শোলাক লেখবার লোক যে কতদর দপ্রাপ্য ছিল তার প্রমাণ, স্বয়ং ব্ৰহ্মাও বেদব্যাসের মনঃকলিপিত গ্ৰন্থ লেখবার ভার গণেশের উপর দিয়েছিলেন। দেশে লেখবার মানষ পাওয়া গেলে আর হিমালয় থেকে লম্বেবােদর দেবতাকে টেনে আনতে হত না। ভগবান গজাননও যে ইচ্ছাসখে এই বিরাট গ্রন্থ লিপিবদ্ধ করতে রাজি হন নি, তার প্রমাণ তিনি লেখা ছেড়ে পালাবার এক ফন্দি বার করেছিলেন। তিনি ব্যাসদেবকে বলেন যে, আমি ব্যথা সময় নন্ট করতে পারব না। আপনি যদি গড়গড় করে শেলাক আবত্তি করে যান, তা হলে আমি ফসফিস করে লিখে যাব। আর আপনি যদি একবার মািখ বন্ধ করেন তো আমি একেবারে কলম বন্ধ করব। বেদব্যাস কি চালাকি করে। হাঁপ ছেড়ে জিরিয়েছিলেন। অথচ হেরম্বকে দিয়ে আগাগোড়া মহাভারত লিখিয়ে নিয়েছিলেন, সে কথা তো সবাই জানে। গণেশকে ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়ে দেবার জন্য তিনি অভটসহস্ৰ অণটশত শেলাক রচনা করেন, যার অর্থ তিনি বঝতেন। আর শকদেব বঝতেন, আর সঞ্জয় হয়তো বঝতেন, হয়তো বঝতেন না; সেই ৮৮০o শেলাক যদি কেউ মহাভারত থেকে বেছে ফেলতে পারেন, তা হলে তিনি আমাদের মহা উপকার করবেন। তবে জমান পন্ডিত ছাড়া এ কাঁটা কাছবার কাজে আর কেউ হাত দেবেন না। তার পর, বড়ো বই লেখাও যেমন শক্ত, পাড়াও তেমনি শক্ত। এমন-কি, সেকালের পন্ডিত লোকেও বড়ো বই ভালোবাসতেন না। এই গ্ৰীৰামপ্রধান দেশে জমান পন্ডিতদের মতো হাজার হাজার পাতা বই গেলা এতদ্দেশীয়দের পক্ষে অসম্পভব। এতদ্দেশীয় পন্ডিতদের বিরাট গ্রন্থ যে ইন্ট ছিল না, সে কথা মহাভারতেই আছে-- ইস্টং হি বিদ্যষাং লোকে সমাসব্যাসধারণাম। সতরাং লেখার হিসেব থেকে হোক আর পড়ার হিসেব থেকেই হোক দ্য হিসেব থেকেই আমরা মানতে বাধ্য যে, ভারত লিপিত হয় নি, ও-কাব্য মহাভারতের অন্তরে সেই ভাবে অবস্থিতি করছে, যে ভাবে শকুন্তলার আংটি মাছের পেটে অবস্থিতি कांद्रछळ । আমরা যদি মহাভারতের ভিতর থেকে ভারতকে টেনে বার করতে পারি তা হলে ভারতের অন্তরে ও অঙ্গে কোন কোন উপাখ্যান ইতিহাস দর্শন ও ধমাধ্যমের বিচার প্রক্ষিপ্ত ও নিক্ষিপত হয়েছে, তার একটা মোটামটি হিসেব পাই। আর যদি ধরে নিই যে, মহাভারতের অতিরিক্ত মালমসলা সব ঐ ভারত-কাব্যের ভিতর