পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৯৬

N9 fV) প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ interpolated হয়েছে, তা হলে অবশ্য ঐ শেলাকস্তাপের ভিতরে ভারতের সন্ধান আমরা পাব না। আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যিনি গ্ৰীক দেবতা হারকিউলিসের মতো ওরকম পণ্ডেকাদ্ধার করতে প্রবত্ত হবেন। অপর পক্ষে গ্ৰীক বীর অ্যালেকজান্ডারের মতো এই জটিল গ্রন্থের Gordian Knot যদি আমরা দ্বিখন্ড করতে পারি, তা হলে হয়তো মহাভারত থেকে ভারতকে পথক করে নিতেও পারি। a ইণ্টারপোলেশনের দৌলতেই ভারত যে মহাভারতে পরিণত হয়েছে, সে বিষয়ে দেশী বিলোেত সকল আধনিক পন্ডিত একমত। কিন্তু এই ইন্টারপোলেশন, ভাষান্তরে ‘প্রক্ষিপ্ত’, কথাটা তাঁরা যে কি অথে ব্যবহার করেন, সেটা যথেস্ট সািপলট নয়। যদি তাঁদের মত এই হয় যে, যেমন মোরগের পেটে চাল পরে দিয়ে একাধারে কাবাব ও পোলাও বানানো হয়, তেমনি ভারতের অন্তরে নানা বস্তু নানা যাগে পরে দিয়ে তার গরত্ন ও মহত্ত্ব সাধন করা হয়েছে, তা হলে সে মত আমি সন্তুটি মনে, গ্রাহ্য করতে পারি নে। আমার বিশবাস, বতমান মহাভারতের কতক অংশ ভারতের ভিতর পরে দেওয়া হয়েছে, এবং অনেক অংশ তার সঙ্গে জড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রক্ষিপত অংশের বিচার এখন সম্পথগিত রেখে যদি আমরা তার সংযোজিত অংশকে ভারতকাব্য থেকে বিষযক্তি করতে পারি, তা হলে আমাদের সমস্যা অনেক সরল হয়ে আসে। আমরা যদি সাহস করে এক কোপে মহাভারতকে দ্বিখন্ড করে ফেলতে পারি, তা হলে, আমার বিশবাস, ভারতকে মহাভারত থেকে বিচিছন্ন করতে পারি। বতমান অবাচীন মহাভারত- এই হিসেবটাই হচেছ গণিতের হিসেবে সোজা; অতএব অপন্ডিতদের কাছে গ্রাহ্য হওয়া উচিত। প্রথম নয়। পবেরি ভিতর অবশ্য অনেক প্রক্ষিপত বিষয় আছে, যা পাবে ভারতকাব্যের অঙ্গস্বরূপ ছিল না; কিন্তু শেষ নয়। পবের ভিতব সম্পভবত এমন একটি কথাও নেই, যা পড়বে ভারতকাব্যের অন্তভুক্ত ছিল। সংক্ষেপে দাইখানি বই একসঙ্গে জড়ে মহাভারত তৈরি করা হয়েছে। এ দইখানি গ্ৰন্থকে পর্বভারত ও উত্তরভারত আখ্যা দেওয়া চলে। সকলেই জানেন। যে, সংস্কৃত সাহিত্যে এরকম কাব্য আরো অনেক আছে। কাদম্পবরী কুমারসম্ভব মেঘদত প্রভাতির এইরকম দটি সাপটে ভাগ আছে। পর্বমেঘ ও উত্তরমেঘ অবশ্য একই হাতের লেখা এবং একই কাব্যের বিভিন্ন অঙ্গ। কাদম্বরীর পবিভাগ বাণভট্টের রচনা, আর উত্তরভাগ তাঁর পত্রের। কুমারসম্পভবের পবিভাগ কালিদাসের রচনা, আর উত্তরভাগ, আর যারই লেখা হোক, কালিদাসের লেখা নয়। এমন-কি রামায়ণের উত্তরকান্ড যে বাল্মীকির লেখনীপ্রসন্ত নয়। সে বিষয়েও সন্দেহ নেই।