পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

RRWy প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ কথা। অমঙ্গলের আশঙ্কার কথা ছেড়ে দিলে যাতে লোকের মনে লতাজা কিংবা জগপসার জন্ম দেয়। তাই হচেছ অশলীল বাক্য। এখন জিজ্ঞাস্য, কার মনে ? আলংকারিকদের মতে, সামাজিকদের মনে। তাঁরা সামাজিক বলতে বৰ্ব্বতেন সেই সম্প্রদায়ের লোক যাঁরা যােগপৎ সভ্য ও সহৃদয়, এক কথায় কালচাড সোসাইটি। দেশভেদে ও যােগভেদে কালচাড সোসাইটিরও রচি বিভিন্ন। আনাতোেল ফ্রাঁসের কথা ইংরেজের রচিতে অশলীল ঠেকে, ফরাসিদের রচিতে নয়। আলংকারিকরা অবশ্য সবদেশী সামাজিকদের কথা বলেছেন, বিদেশী সামাজিকদের নয়। G শলীলতা-অশলীলতা সম্পবন্ধে আলংকারিকদের সেকেলে মতামত একালের লোককে সমরণ করিয়ে দেবার উদ্দেশ্য কি ? আমাদের দেহে এখন তো আর সেকালের মন নেই। যাগে যাগে লোকের মনের পরিবতন ঘটে, সতরাং সেকালের বিধিনিষেধের একালে সার্থকতা নেই। এ কথা সত্য বটে, কিন্তু সম্পপণ্য সত্য নয়। মানষের মতামত যে পরিমাণে বদলায়, তার মনের প্রকৃতি সে পরিমাণে বদলায় না। অতএব অনেক সেকেলে মতামতের অন্তরে যে মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়। সে মনোভাব কস্মিনকালেও একেবারে বাতিল হয়ে যায় না, এবং অনেক ক্ষেত্রে আমরা আবিহুকার করি যে, প্রাচীন মন বর্তমান মনের চাইতে এক ধাপ উচুতে উঠেছিল। আমার বন্ধ শ্রীযন্ত অতুলচন্দ্র গতি তাঁর রচিত কাব্যজিজ্ঞাসায় প্রমাণ করেছেন যে, যে সমাজের মনে কাব্যজিজ্ঞাসা নেই সে সমাজ কখনো কাব্যমীমাংসায় উপনীত হতে পারে না। এই কারণেই আমাদের কাব্যবিচার প্রায়ই বাজে ও এড়ো হয়। আলংকারিকদের কাব্যবিচারের আর যাই এটি থাক, সে বিচার কখনো ভুল পথে যায় নি ; বেশি দীর যেতে না পারে, কিন্তু ঠিক পথেই গিয়েছে। সম্প্রতি বাংলা সাহিত্যে একটি নতন কথার আবিভােব হয়েছে। সে কথাটি হচ্ছে 'সাহিত্যের সম্ববাস্থ্যরক্ষা’। এখন, এ কথা জোর করে বলা যেতে পারে যে, আমাদের পবিপরীষরা সাহিত্যের সম্ববাস্থ্য নিয়ে কখনো মাথা ঘামান নি; তাঁরা যার আলোচনা করেছেন, সে হচ্ছে কাব্যের রােপ। আর, যার রােপ নেই ভা। যে কাব্য নয়, এ কথা অবিসম্পবাদী। এই রাপের বিচার করাই সমালোচকের একমাত্র কতব্য । আলংকারিকদের মতে অশলীলতা একটি দোষ ; কেননা, তা কাব্যের রােপ নন্ট করে। কারণ ব্ৰীড়া জগাপসা প্রভাতি মনোভাব কাব্যের রসাসবাদনে বিঘা ঘটায়, একটি বদ সর লাগালে যেমন রাগের রােপ নন্ট হয় ; কারণ, শ্রোতার কানে তা বেসরা লাগে। এ কথা বলা বাহাল্য যে, বেসর তার কানেই শােধ ধরা পড়ে যার কানে ও প্ৰাণে সরে আহে। অশলীলতা কাব্যের দোষ, কেননা তা সামাজিক লোকের রচিতে বেখাপ্পা ঠেকে। এ ক্ষেত্রে সামাজিক বলতে আলংকারিকরা বঝতেন। কাব্যরসিক।