পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পাঠান-বৈষ্ণব রাজকুমার বিজলি খাঁ SGS প্রধানত ঐকান্তিক ভক্তির ধম, এ কথা কে না জানে ? ভারতবর্ষের মধ্যযাগের বৈষ্ণবধম যে মসলমানধমের এতটা গা-ঘোষা, তার কারণ পাঁচশো বৎসর ধীরে হিন্দধম ও মসলমানধম পাশাপাশি বাস করে আসছিল। একেশবরবাদ, ও মানষমাত্রেই যে ভগবানের সন্তান, এ দটিই হচ্ছে মসলমানধমের বড়ো কথা। তাই এই নবহিন্দধমৌ আহিন্দিরও প্রবেশের পণ্য অধিকার ছিল। তা যে ছিল, তার প্রমাণ চৈতন্যভাগবত ও চৈতন্যচরিতামতের মধ্যে দেদার আছে। সতরাং শীল মহাশয়ের আবিস্কৃত আহম্মদ খাঁ নামক পাঠানও যে উক্ত ধমে দীক্ষিত হন, এ কথা অবিশ্ববাস করবার কোনো কারণ নেই। তবে বিজলি খাঁ নামক যে একটি স্বতন্ত্র পাঠান রাজকুমার ছিলেন সে বিষয়েও সন্দেহ নেই, এবং খাব সম্পভবত তাঁর সঙ্গে চৈতন্যদেবের মাথারার সন্নিকটে দেখা হয়েছিল। Tabakat-i-Akbari নামক ফারসি গ্রন্থে ‘তাঁর নামধাম এবং তাঁর বাপের নামও পাওয়া যায়। আকবর কর্তৃক কালিঞ্জার-দাগ আক্ৰমণসত্রে গ্রন্থকার বলেন যে— This is a strong fortress, and many former Sultans had been ambitious of taking it. Sher Khan Afghan (Sher Shah) besieged it for a year, but was killed in the attempt ; take it, as has been narrated in the history of his reign. During the interregnum of the Afghans, Raja Ram Chunder had purchased the fort at a high price from Bijilli Khan, the adopted son (Pisan-i-khwanda) of Bihar Khan Afghan. এর থেকে জানা যায় যে, রাজকুমার বিজলি খাঁ কালিঞ্জরের নবাবের পোষ্যপত্র: এবং তিনিই এ রাজ্য রাজা রামচন্দ্রকে বিক্লিক ক’রে চলে গিয়েছিলেন, সম্পভবত বান্দাবনে। তবে তিনি যে কবে কালিঞ্জার-রাজ্য ত্যাগ করেন তার তারিখ আমরা জানি নে, সম্পভবত তাঁর পিতা বিহারি খাঁ আফগানের মাতুর পর তিনি যখন স্বয়ং নবাব হন। শের শাহর মন্ত্যু হয়েছিল ১৫৪৪ খীস্টাব্দে, বিজলি খাঁ খােব সম্ভবত এর পরেই কালিঞ্জর হস্তান্তর করেন। মহাপ্রভুর সঙ্গে তাঁর যখন সাক্ষাৎ হয় তখন তাঁর অলপ বয়েস, সতরাং রাজা রামচন্দ্ৰকে তিনি যখন কালিঞ্জার-দগ বিক্রি করেন, তখন তাঁর বয়েস আন্দাজ পঞ্চাশ। বিজলি খাঁ কালিঞ্জরের নবাব হওয়া সত্ত্বেও যে পরমভাগবত ব'লে গণ্য হয়েছিলেন, এ ব্যাপার অসম্ভব নয! বৌদ্ধযাগের বড়ো বড়ো রাজামহারাজারাও পরামসৌগত বলে গণ্য হতেন। তা ছাড়া, এ নিববৈষ্ণবধমে দীক্ষিত হবার জন্য বিষয়সম্পত্তি ত্যাগ করবার প্রয়োজন ছিল না। ভোগে অনাসক্ত হলেই বৈষ্ণব হওয়া যেত। মহাপ্ৰভু রঘনাথ দাসকে এই কথা বলেই তাঁকে সংসারত্যাগের সংকলপ হতে বিরত করেন। মহাপ্ৰভু নিজে সন্ন্যাস গ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু অপরকে সন্ন্যাস গ্রহণ করতে কখনো উৎসাহ দেন নি। এমন-কি, বালযোগী অবধােত নিত্যানন্দকে সন্ন্যাসীর ধাম ত্যাগ করে গাহপথ্য ধম অবলম্পবন করতে বাধ্য করেছিলেন। Y Elliots' History of India, vol. I, p. 333.