পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কথার কথা S64 থাকলে, আমরা যা perfect তা ব্যতীত কিছ, বলতে কিংবা করতে রাজ হতুম না। আর আমরা সকলেই মনে মনে জানি যে, আমাদের অতি ভালো কাজ, অতি ভালো কথাও perfectionএর অনেক নীচে। আসল কথা, মাতৃ আছে বলেই বেচে সখি ! পণ্যক্ষয় হবার পর আবার মত লোকে ফিরে আসবার সম্পভাবনা আছে বলেই দেবতারা অমরপরীতে সাফতিতে বাস করেন, তা না হলে সবগও তাঁদের অসহ্য হত। সে যাই হোক, আমরা মানষ, দেবতা নাই; সতরাং আমাদের মখের কথা দৈববাণী হবে। এ ইচ্ছা আমাদের মনে স্বাভাবিক নয়। দ্বিতীয়ত, যদি কেউ শািন্ধ অমর হবার জন্য লিখব, এই কঠিন পণ করে বসেন তা হলে সে ইচছা সফল হবার আশা কত কম বঝতে পারলে, তিনি যদি বদ্ধিমান হন। তা হলে লেখা হতে নিশ্চয়ই নিবত্ত হবেন। কারণ সকলেই জানি যে, হাজারে নশো নিরেনবােবই জনের সরস্বতী মতবৎসা। তা ছাড়া সাহিত্যজগতে মড়ক অন্টপ্রহর লেগে রয়েছে। লাখে এক বাঁচে, বাদবাকির প্রাণ দা-দান্ডের জন্যও নয়। চরক পরামর্শ দিয়েছেন, যে দেশে মহামারীর প্রকোপ, সে দেশ ছেড়ে পলায়ন করাই কতব্য। অমর হবার ইচছায় ও আশায় কে সে রাজ্যে প্রবেশ করতে চায় ? 8 বিদ্যাভূষণ মহাশয়ের আরো বক্তব্য এই যে, জীয়ন্ত ভাষার ব্যাকরণ করতে নেই, তা হলেই নিঘাত মরণ। সংস্কৃত মতভাষা, কারণ ব্যাকরণের নাগপাশে বদ্ধ হয়ে সংস্কৃত প্রাণত্যাগ করেছে। আরো বক্তব্য এই যে, মাখের ভাষার ব্যাকরণ নেই, কিন্তু লিখিত ভাষার ব্যাকরণ নইলে চলে না। প্রমাণ— সংস্কৃত শব্ধ। অমরত্ব লাভ করেছে, পালি প্রভাতি প্রাকৃত ভাষা একেবারে চিরকালের জন্য মরে গেছে; অর্থাৎ, এক কথায় বলতে গেলে, যে-কোনো ভাষারই হোক-না কেন, চিরকালের জন্য বাঁচতে হলে আগে মারা দরকার। তাই যদি হয়, তা হলে বাংলা যদি ব্যাকরণের দাঁড়ি গলায় দিয়ে আত্মহত্যা করতে চায়, তাতে বিদ্যাভূষণ মহাশয়ের আপত্তি কি ? তাঁর মতানসারে তো যমের দায়োর দিয়ে অমরপরীতে ঢাকতে হয়। তিনি আরো বলেন যে, পালি প্রভৃতি প্রাকৃত ভাষায় হাজার হাজার গ্রন্থ রচিত হয়েছে, কিন্তু প্রাকৃত সংস্কৃত নয় বলে পালি প্রভৃতি ভাষা লিপিত হয়ে গেছে। অতএব বাংলা যতটা সংস্কৃতের কাছাকাছি নিয়ে আসতে পাের, ততই তার মঙ্গল। যদি বিদ্যাভূষণ মহাশয়ের মত সত্য হয়, তা হলে সংস্কৃতিবহল বাংলায় লেখা কেন, একেবারে সংস্কৃত ভাষাতেই তো আমাদের লেখা কতব্য। কারণ, তা হলে অমর হবার বিষয় আর কোনো সন্দেহ থাকে না। কিন্তু একটা কথা আমি ভালো বঝতে পারছি নে ; পালি প্রভৃতি ভাষা মত সত্য, কিন্তু সংস্কৃতও কি মত নয়? ও দেবভাষা অমর হতে পারে, কিন্তু ইহলোকে নয়। এ সংসারে মাতুত্যুর হাত কেউ এড়াতে পারে না। পালিও পারে নি, সংস্কৃতও পারে নি, আমাদের মাতৃভাষাও পারবে না। তবে যে-কদিন বেচে আছে, সে-কদিন সংস্কৃতের মতদেহ সকন্ধে নিয়ে বেড়াতে হবে- বাংলার উপর এ কঠিন পরিশ্রমের বিধান কেন ? বাংলার প্রাণ একটখানি, অতখানি চাপ সইবে না।