পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

RVR প্রবন্ধসংগ্ৰহ নিকট অপরিজ্ঞাত হলেও বঙ্গ-ভাষাভাষী বাঙালি মাত্রেরই নিকট বিশেষ সপরিচিত । সম্পাদক মহাশয়ের আপত্তি যখন ঐ বিভক্তি সম্পবন্ধে, তখন শব্দের পরিবতে বিভত্তি’ এই শব্দটিই ব্যবহার করা উচিত ছিল। ৩. ‘সাহিত্যিক।” এই বিশেষণটি বাংলা কিংবা সংস্কৃত কোনো ভাষাতেই পাবে। ছিল না, এবং আমার বিশ্ববাস, উক্ত দাই ভাষার কোনটির ব্যাকরণ অনসারে ‘সাহিত্য” এই বিশেষ্য শব্দটি “সাহিত্যিক’-রািপ বিশেষণে পরিণত হতে পারে না। বাংলার নব্য “সাহিত্যিকদের বিশ্ববাস যে, বিশেষ্যের উপর অত্যাচার করলেই তা বিশেষণ হয়ে ওঠে। এইরুপ বিশেষণের সন্টি আমার মতে অদ্ভুত সন্টি। এই পদ্ধতিতে সাহিত্য রচিত হয় না, literature শব্ধ, literatural হয়ে ওঠে। ৪. ‘ভাষাভাষী” এই সমাসটি এতই অপােব যে, ও কথা শনে হাসাহ।াসি করা ছাড়া আর কিছল করা চলে না। ৫. ‘আমরা’ শব্দটি পদের পবিভাগে না থেকে শেষভাগে আসা উচিত ছিল। তা না হলে পদের অন্বয় ঠিক হয় না। “করতুম’এর পবে নয়, ‘ব্যবহার’ এবং “পক্ষপাতী।” এই দাই শব্দের মধ্যে এর যথাৰ্থ স্থান। অযথা এবং অনৰ্থক বিশেষণের প্রয়োগ, ভুল অর্থে বিশেষ্যের প্রয়োগ, অদ্ভত বিশেষণ এবং সমাসের সন্টি, উলটোেপালটা” রকম রচনার পদ্ধতি প্রভাতি বজনীয় দোষ আজকালকার মাদ্রিত সাহিত্যের পত্রে পত্রে ছত্ৰে ছত্ৰে দেখা যায়। সাধভাষার আবরণে যে-সকল দোষ, শােধ অন্যমনস্ক পাঠকদের নয়, অন্যমনস্ক লেখকদেরও চোখে পড়ে না। মাদ্রিত সাহিত্য বলে কোনো জিনিস না থাকলেও মাদ্রিত ভাষা বলে যে একটা নতুন ভাষার সন্টি হয়েছে, তা অস্বীকার করবার জো নেই। লেখার ভাষা শািন্ধ, মখের ভাষার প্রতিনিধি মাত্র। অনিত্য শব্দকে নিত্য করবার ইচ্ছে থেকেই অক্ষরের সন্টি। অক্ষর-সন্টির পবিদ্যাগে মানষের মনে করে রাখবার মতো বাক্য রাশি কন্ঠস্থ করতে করতেই প্ৰাণ যেত। যে অক্ষর আমরা প্রথমে হাতে লিখি, তাই পরে ছাপানো হয়। সতরাং ছাপার অক্ষরে উঠলেই যে কোনো কথার মর্যাদা বাড়ে, তা নয়। কিন্তু দেখতে পাই অনেকের বিশ্ববাস তার উলটো। আজকাল ছাপার অক্ষপে যা বেরোয় তাই সাহিত্য বলে গণ্য হয়। এবং সেই একই কারণে মাদ্রিত ভাষা সাধভাষা বলে সম্পমান লাভ করে। গ্রামোফোনের উদারস্থ হয়ে সংগীতের মাহাত্ম্য শািন্ধ এ দেশেই বদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। আসলে সে ভাষার ঠিক নাম হচ্ছে বাবা-বাংলা। যে গণে ইংলিশ বাবা-ইংলিশ হয়ে ওঠে, সেই গণেই বঙ্গ ভাষা বাবা-বাংলা হযে উঠেছে। সে ভাষা আলাপের ভাষা নয়, শােধ প্ৰলাপের ভাষা। লেখার যা সর্বপ্রথম এবং সব প্রধান গণ-প্ৰসাদগণে— সে গণে বাবা-বাংলা একেবারেই বঞ্চিত। বিদের মতো, ভাষাও কেবলমাত্র পথিগত হয়ে উঠলে তার উদ্ধদৰ্শগতি হয় কি না বলতে পারি নে, কিন্তু সদগতি যে “হয় না। সে বিষয়ে আর সন্দেহ নেই। আসলে এই মাদ্রিত ভাষায় মাতৃত্যুর প্রায় সকল লক্ষণই সম্পন্ট। শােধ আমাদের মাতৃভাষার নাড়িজ্ঞান লপ্ত হয়ে রয়েছে বলে আমরা নব্যবঙ্গ সাহিত্যের প্রাণ আছে কি নেই তার ঠাওর করে উঠতে পারি নে। মাখের ভাষা যে জীবন্ত ভাষা, এ বিষয়ে দ্য মত নেই।