পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R O প্রবন্ধসংগ্ৰহ আর শেষটির সাহিত্যিক; লৌকিক কথার চুরিকে চুরি বলে ধরা যায় না, কেননা তার ভিতর অসংখ্য লোকের হােত আছে, ও হচ্ছে সামাজিক আত্মার কাজ, ওর জন্য ব্যক্তিবিশেষকে দায়ী করা চলে না। অপর পক্ষে সাহিত্যিক চৌয ব্যািন্তবিশেষের কাজ, অতএব সেটা ধরাও যায়, ও সে কথা-চোরকে শাসন করাও যায়। 8 কিন্তু একটা ভেবে দেখলেই দেখতে পাবেন যে, উক্ত লৌকিক ও সাহিত্যিক চুরি, উভয় ব্যাপারেরই মলে আছে একই গরজ। মসলমানরা আমাদের দেশে যে-সব নতুন কিছমের আদালত-কাছারি আইন-কানন এনেছে তাদের সঙ্গে তাদের বিদেশী নােমও এসেছে। এবং সেই আইন-আদালত যেমন সমাজের উপর চেপে বসেছে, তাদের নামও তেমনি ভাষার ভিতর ঢাকে বসেছে । , ফিরিঙ্গিরা যে-সব নতুন জিনিস এ দেশে নিয়ে এসেছে আর আমাদের ঘরে ঘরে যার পথান হয়েছে, তাদের নামও আমাদের মখে মখে চলেছে। তাস হিন্দরা খেলত না, তারা খেলত পাশা; মসলমানরাও খেলত না, তারা খেলত হয় সতরণ9 নয়। গঞ্জিফা। ফিরিঙ্গিরা যখন দেশে তাস আনলে তখন শােধ বিলিত নয়। প্ৰমারা খেলতেও আমরা শিখলাম, ফলে ফরাসি কথা জয়ো বাংলা হয়ে গেল, আর সেই সঙ্গে জয়ো-খেলিয়ে বাঙালিরা ফরাসিতে যাকে বলে জয়াড়ি তাই হয়ে উঠল। এ যাগে ইংরেজেরা আমাদের অনেক জিনিস দিয়েছে, যা আমাদের ভাষায় সম্ভবনামে ও আমাদের ঘরে সবরপে আছে ও থেকেও যাবে। একটা সব লোকবিদিত উদাহরণ দেওয়া যাক। বোতল গেলাস বাংলা ভাষা থেকে কখনো বেরিয়ে যাবে না, কেননা ও দই চিজও বাংলাদেশ থেকেও কখনো বেরিয়ে যাবে না। বাংলা যদি একদম বেসরা হয়ে যায়, তা হলেও বাঙালিরা ওষধ খাবে, আর মাথা ঠান্ডা করবার জন্য তেল মাখবে। অতএব আমাদের কাচের পাত্র চাই। তার পর ইংরেজ-প্রবতিত নতন কমজীবনও তৎসম অবস্থায় না হোক তদভব অবস্থায় থেকে যাবে। আর সে কারণ বাংলা ভাষায় সে জীবনের বিলেতি নাম সব, তৎসম-রাপে না হোক তদভব-রাপে বজায় থাকবে। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, ইংরেজি জ্ঞানের ভাষাও কতক পরিমাণে বাংলা ভাষার অন্তরঙ্গ হয়ে থাকবে। ইংরেজি শিক্ষার প্রসাদে অনেক নািতন জ্ঞান, অনেক নাতন ভাব আমাদের মনের ভিতবু ঢকে গিয়েছে, তাই তাদের বিলোেত নামও আমাদের মাথে মাখে চলেছে। যেহেতু দেশের জনগণ ইংরেজি-শিক্ষিত নয়, সে কারণ ঐ-সব ইংরেজি কথা সবলপসংখ্যক লোকের মখেই শোনা যায়; আর তাদের বিদেশী ধবনি আমাদের কানো সহজেই ধরা পড়ে। আর সেই কারণেই বাংলা ভাষা থেকে অনেকে চান আইডিয়াকে গলাধাক্কা দিয়ে বার করে দিতে। বাঙালির মািখ থেকে বিলেতি কথা কেউ খসাতে পারবেন না, অতএব সে চোটা কেউ করেনও না। আমরা চাই শােধ লিখিত ভাষায় বিদেশী শব্দ বয়কট করতে। কিন্তু আমাদের এই সাতশো বছরের বর্ণসংকর ভাষাকে যদি আবার আয করতে