পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NRWV» প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ ভারতবর্ষ একটি বিরাট আইডিয়াল-র পেই বিরাজ করছে। আমাদের বাঞ্ছিত। ইউটোপিয়া ভবিষ্যতের অণ্ডকপথ রয়েছে। কিন্তু এই আইডিয়ালকে দটি সম্পপণ্য বিপরীত দিক থেকে নিত্যই আক্ৰমণ সহ্য করতে হয়। এক দিকে ইংরেজি সংবাদপত্র, অপর দিকে বাংলা সংবাদপত্র এই আইডিয়ালটিকে নিতান্ত উপহাসের পদাৰ্থ মনে করেন; উভয়েই শিক্ষিত সম্প্রদায়ের উপর বিদ্রপবাণ বর্ষণ করেন। কাগজওয়ালাদের মতে এই মনোভাবটি বিদেশী-শিক্ষালব্ধ, এবং সেইজন্যই সত্বদেশী-ভিত্তিহীন; কেননা ভারতবর্ষের অতীতের সঙ্গে তার কোনো যোগ নেই। ইংরেজি সংবাদপত্রের মতে ভারতবর্ষের সভ্যতার মলে এক নয়, বহ; এবং যা গোড়া হতেই পথক, তার আর কোনোরাপ মিলন সম্ভব নয়। কুকুর আর বেড়াল নিয়ে এক-সমাজ গড়ে তোলা যায় না; ও দই শ্রেণীর জীব শােধ গহস্বামীর চাবকের ভয়ে একসঙ্গে ঘর করতে পারে। অপর পক্ষে বাংলা সংবাদপত্রের মতে হিন্দসমাজের বিশেষত্বই এই যে, তা বিভক্ত। এ সমাজ শতরঞ্জের ঘরের মতো ছক-কাটা। এবং কার কোন ছক, তাও অতি সনিদিষ্ট। এই সমাজের ঘরে কে সিধে চলবে, কে কোনাকুনি চলবে, কে এক পা চলবে, আর কে আড়াই পা চলবে, তারও বাঁধাবাঁধ নিয়ম আছে। এর নাম হচ্ছে বণাশ্রমধাম । নিজের নিজের গন্ডির ভিতর অবস্থিতি করে নিজের নিজের চাল রক্ষা করাই হচ্ছে ভারতবাসীর সনাতন ধর্ম। সতরাং যাঁরা সেই দাবার ঘরের রেখাগলি মাছে দিয়ে সমগ্র সমাজকে একঘরে করতে চান, তাঁরা দেশের শত্র। শিক্ষিত সম্প্রদায় যে ঐক্য চান তা ভারতবর্ষের ধাতে নেই, সতরাং জাতির উন্নতির যে ব্যবস্থা তাঁরা করতে চান, তাতে শােধ সামাজিক অরাজকতার সম্মিট করা হবে। সমাজের সনিদিষ্ট গন্ডিগলি তুলে দিলে সমাজতরী কোনাকুনি চ'লে তীরে আটকে যাবে, এবং সমাজের ঘোড়া আড়াই পা'র পরিবতে চার পা তুলে ছাটবে। এ অবশ্য মহা বিপদের কথা। সতরাং ভারতবর্ষের অতীতে এই ঐক্যের আইডিয়ালের ভিত্তি আছে কি না, সেটা খাঁজে দেখা দরকার। এই কারণেই সম্পভবত রাধাকুমদাবাব, দ, হাজার বৎসরের ইতিহাস খড়ে সেই ভিত বার করবার চেষ্টা করেছেন, যার উপরে সেই কাম্যবস্তুকে সম্প্রতিষ্ঠিত করা যেতে পারে। এ যে অতি, সাধ, উদ্দেশ্য সে বিষয়ে বোধ হয়। দ্বিমত নেই। " R রাধাকুমদবাবা জাতীয় জীবনের ঐক্যের মািল যে প্রাচীন যাগের সামাজিক জীবনে আবিষকার করতে চেন্টা করেছেন, তার জন্য তিনি আমার নিকট বিশেষ ধন্যবাদাহ । অনেকে, দেখতে পাই, এই ঐক্যের সন্ধান, ঐতিহাসিক সত্যে নয়, দার্শনিক তথ্যে লাভ করেন। এ শ্রেণীর লোকের মতে সমগ্র ভারতবর্ষ এক ব্ৰহ্মাসত্রে গ্রথিত; কেননা অদ্বৈতবাদে সকল অনৈক্য তিরক্ষাকৃত হয়। কিন্তু যে সমস্যা নিয়ে আমরা নিজেদের বিৱত করে তুলেছি, তার মীমাংসা বেদান্তদর্শনে করা হয় নি; বরং ঐ দশন থেকেই অনমান করা অসংগত হবে না যে, প্রাচীন যাগে জাতীয় জীবনে কোনো ঐক্য ছিল না। মানবজীবনের সঙ্গে মানবমনের যোগ অতি ঘনিষ্পীঠ। কাব্যের মতো দশনও