পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতবষের ঐক্য ܠ7ܓ সীতার মতো এ-সকল দেবতা হলমখে ধারণী হতে উঘিত হয়েছে । তাই এ দেশের প্ৰতিমা মাটির দেহ ধারণ করে এবং জলে তার বিসজন হয়। “তোমারি প্রতিমা গাড়ি মন্দিরে মন্দিরে’ এ কথা মোটেই বৈদিক মনোভাবের পরিচায়ক নয়। কেননা, পশ্চনদবাসী আয্যেরা মন্দিরও গড়াতেন না, প্ৰতিমাও পাজা করতেন না। এই দেশভক্তি পৌরাণিক সাহিত্যে অতি পরিস্ফট হয়ে উঠেছে। তার কারণ, বৈদিক যােগ ও পৌরাণিক যাগের মধ্যে যে বৌদ্ধ যােগ ছিল সেই যাগেই এই সবদেশজ্ঞান ও সর্বদেশপ্রীতি ভারতবষময় ব্যাপিত হয়ে পড়েছিল। বৌদ্ধধম অবৈদিক ধম, এবং সাবজনীন বলে তা সাবভৌম ধম । অপর পক্ষে বৈদিক ধৰ্ম 'আযীদের গহধম, বড়ো জোর কুলাধম । সমগ্ৰ দেশকে একাত্ম করবার ক্ষমতা সে ধমের ছিল না। যেমন অসারদের সঙ্গে যন্ধে সরেরা এক ঈশানকোণ ব্যতীত আর-সকল দিকেই পরাস্ত হয়েছিলেন, তেমনি সম্পভবত ইন্দ্র চন্দ্র বায় বরণ প্রভাতি বৈদিক দেবতারা দেশজ দেবতাদের সঙ্গে যন্ধে এক গহকোণ ব্যতীত আর সবত্রই পরাস্ত হয়েছিলেন। অন্তত আকাশের দেবতারা যে মাটির দেবতাদের সঙ্গে সন্ধিপথাপন করতে বাধ্য হয়েছিলেন, তার প্রমাণ পৌরাণিক হিন্দধম। বৈদিক ও লৌকিক মনোভাবের মিশ্রণে এই নবধর্মভাবের জন্ম। আয্যেরা যে কস্মিনকালেও সমগ্ৰ ভারতবর্ষকে একদেশ বলে স্বীকার করতে চান নি, তার প্রমাণ সমিতিশাস্ত্রে পাওয়া যায়। বৌদ্ধধমের অধঃপতন এবং ব্রাহ্মণ্যধমের পািনরভু্যদয়ের সময় মন-সংহিতা লিখিত হয়। এই সংহিতাকারের মতে ব্ৰহ্মাবতী - এবং আযাবত-বহি ভর্তিত সমগ্ৰ ভারতবর্ষ হচ্ছে ঘণ্য স্লেচ্ছদেশ। মনাের টীকাকার মেধাতিথি বলেন যে, দেশের স্লেচ্ছ ত্বদোষ কিংবা আযত্বগণ নেই। যে দেশে বেদবিহিত ব্রুিয়াকিম নিরত আয্যেরা বাস করেন, সেই হচ্ছে আর্যভূমি, বাদবাকি সব স্লেচ্ছদেশ। আযীদের এই সবজাতিজ্ঞান সমগ্র ভারতবষের সবদেশজ্ঞানের প্রতিকােল ছিল। পঞ্চনদের পন্gনদীর উল্লেখ করে তপণের মন্ত্র উচ্চারণপবাক বৈদিক ঋষিরা যে গন্ডাষ করতেন, সে কতকটা সেই ভাবে, যে ভাবে একালে বিলাতি আয্যেরা মহোৎসবের ভোজনান্তে The Land we live inএর নামোচচারণ করে সরার আচমন করেন। প্রাচীন আযজাতির মনে দেশপ্রীতির চাইতে আত্মপ্রীতি ঢের বেশি প্রবল ছিল। দেশের সর্বাতন্ত্র্য রক্ষা নয়, নিজেদের সর্বাতন্ত্র্য রক্ষাই ছিল তাঁদের সবধম। রাধাকুমদবাবা এমন-কোনো বিরাদ্ধপ্রমাণ দেখাতে পারেন নি, যাতে করে আমার এই ধারণা পরিবতিত হতে পারে। 8 ইংরেজ যে সব প্রথমে ভারতবষের মানচিত্র লালবণে চিত্রিত করেছেন, তা নয়। আজ দশ হাজার বৎসরেরও পড়বে আশোকও একবার ঐ মানচিত্র গেরয়ারঙে রঞ্জিত করেছিলেন। এ কথা শিক্ষিত লোকমাত্রেরই জানা না থাক, শোনা আছে। যা সপরিচিত। তার আর নতন করে আবিস্কার করা চলে না, সতরাং রাধাকুমদবাব প্রাচীন ভারতের একরাষ্ট্ৰীয়তার মল বৈদিক সাহিত্যে অনসন্যবান করেছেন, তাঁর পাস্তিকার মৌলিকতা এইখানেই। সতরাং তিনি অনসন্ধানের ফলে যে নািতন সত্য আবিহুকার করেছেন, তা বিনা পরীক্ষায় গ্রাহ্য করা যায় না। ܬܠܬ