পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

RSR প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ ৱাহ্মণে যে সামাজ্যের উল্লেখ আছে তা ক্ষত্ৰিয়ের বাহবিল বন্ধিবল ও চরিত্রবল দুবারা নয়, ব্রাহ্মণের মন্ত্রবলের স্বারা লাভ করবার বস্তু। কারণ শত্রনাশের জন্য তাঁদের যাদ্ধ করা আবশ্যক হত না, ব্ৰহ্ম-পরিমর-কম প্রভাতি অভিচারের দ্বারাই সে কামনা সিদ্ধ হত। এই অতীত সাহিত্যের ভিত্তির উপর যদি ভারতবষের ভবিষ্যৎ ঐক্যের প্রতিস্ঠা করতে হয়, তা হলে আমাদের মনোজগতের গন্ধব পােরী চিরকাল আকাশেই ঝলবে। আমরা ইউরোপীয় সভ্যতার নাতন মদ নিত্যই সংস্কৃত সাহিত্যের পরোনো বোতলে ঢালছি। আমরা স্পেন্সরের বিলেতি মদ শংকরের বোতলে ঢালি Comte কতের , ফরাসি মদ মনার বোতলে ঢালি, এবং তাই যােগ সঞ্চিত সোমরস বলে পান করে তৃপিতিও লাভ করি মোেহও প্রাপ্ত হই। কিন্তু এই ঢালাঢালি এবং ঢলাঢলিরও একটা সীমা আছে। বিসমার্কের জমান মদ ব্ৰাহ্মণের যজ্ঞের চমসে ঢালতে গেলে আমরা সে সীমা পেরিয়ে যাই। ও-হাতায় এ-জিনিস কিছতেই ধরবে না। ইংরেজি শিক্ষার প্রসাদে আমরা ব্ৰাহ্মণসাহিত্যের আধিদৈবিক ব্যাপার-সকলের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যার চেন্টা করতে পারি, এবং চাই কি তাতে কৃতকাৰ্যও হতে পারি; কিন্তু শােধ ইংরেজি শিক্ষা নয়। তদপরি ইংরেজি ভাষার সাহায্যেও তার ‘আধিরাভিট্ৰক’ ব্যাখ্যা করতে পারি নে। C এতদিন প্রাচীন ভারতের নাম উল্লেখ করবামাত্রেই বর্ণাশ্রমধম, ধ্যান-ধারণা নিদিধ্যাসনএই-সকল কথাই আমাদের স্মরণপথে উদিত হত, এবং বঙ্গ সাহিত্যে তারই গণকীতন করে আমরা যশ ও খ্যাতি লাভ করতুম। ইমপেীরিয়লিজম নামক আহেলবিলাতি পদাৰ্থ পরাকালে এদেশে ছিল, এরপ কথা পাবে কেউ বললে তার উপর আমরা খড়গহস্ত হয়ে উঠতুম, কেননা ওরােপ কথা আমাদের দেশভক্তিতে আঘাত করত। বৈরাগ্যের দেশ। ঐহিক ঐশবয্যের সপশে কলষিত হয়ে ওঠে। কিন্তু আজ যে নবদেশভক্তি ঐ ইমপীরিয়লিজমের উপর এত ঝাঁকেছে, তার একমাত্র কারণ কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রের আবিভকার। উক্ত গ্রন্থ থেকেই আমরা এই জ্ঞান লাভ করেছি যে, ইউরোপীয় রাজনীতির যা শেষ কথা ভারতবর্ষের রাজনীতির তাই প্রথম কথা। এই সত্যের সাক্ষাৎকার লাভ করে আমাদের চোখ এতই ঝলসে গেছে যে, আমরা সকল তন্ত্রে সকল মন্ত্রে ঐ সামাজ্যেরই প্রতিরােপ দেখছি। এরপ হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু আমাদের চোখ যখন আবার প্রকৃতিপথ হবে তখন আমরা এই প্রাচীন ইমপীরিয়লিজমকেও খাটিয়ে দেখতে পারব এবং কৌটিল্যকেও জেরা করতে শিখব। ইতিমধ্যে এই কথাটি আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, চন্দ্রগপত রাজনীতির ক্ষেত্রে যে মহাভারত রচনা করেছিলেন কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র শােধ তারই ভাষ্য। যে মনো - ভাবের উপর সে সামাজ্য প্রতিঠিত হয়েছিল, সে মনোভাব বৈদিক নয়, সম্ভবত আযও নয়। মন প্রভাতি ধর্মশাস্ত্রের সঙ্গে তুলনা করে দেখলে দেখতে পাওয়া যায় যে, উক্ত অর্থশাস্ত্রকারের মানসিক প্রকৃতি এবং ধমশাস্ত্রকারদের প্রকৃতি এক নয়।