পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

RN y প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ সমাজের সকল অঙ্গ পঙ্গ হয়ে যায়, তাতেও সমাজ তার নিজের গোঁ ছাড়ে না। উদাহরণ স্বরপ, এই প্যাটেল-বিলের বিপক্ষ দলের কথাই ধরা যাক-না। এরা বলেন, জাতিভেদ-প্রথা যখন হিন্দসমাজ ছাড়া অপর কোনো সভ্যসমাজে নেই, তখন হিন্দসভ্যতার ভিত্তিই হচ্ছে জাতিভেদ-প্রথা। অতএব হিন্দসভ্যতার বিশিষ্টতা, অর্থাৎ জাতিভেদ-প্রথা, বজায় রাখতেই হবে, তার জন্য যদি হিন্দজাতি ধলাশায়ী হয়, তাতেও কোনো ক্ষতি নেই। এ কথা বলাও যা, আর সেপক্টেটরের কথায় সায় দেওয়াও তাই। সেপক্টেটরের এ মত শােধ একমাত্ৰ বৰ্ণভেদের উপরই প্রতিষ্ঠিত। ওরকম ঢেরা-সই দেওয়াতে বর্ণধমািজ্ঞানের পরিচয় দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু বাণজ্ঞানের পরিচয় দেওয়া হয় না, ধমজিজ্ঞানেরও নয়। জাতিভেদ-প্রথা হিন্দসমাজের গোড়ার কথা হলেও হিন্দসভ্যতার শেষ কথা নাও হতে পারে। সভ্যতার অবশ্য নানা রােপ, বিশেষ্য ও বিশেষণ আছে; কিন্তু তার ব্রুিয়া এক, এবং সে ব্রুিয়া হচ্ছে মানবজীবনের মােখ্য ক্লিয়া, to be । এ কথায় অবশ্য তাঁরা আপত্তি করবেন, যাঁদের বিশ্ববাস মানবপ্রকৃতির মল ধাতু হচ্ছে to have । কিন্তু এরা ভুলে যান যে, জীবনে কিছ পেতে হলে তার আগে কিছ হতে হয়। এক সভ্যতার সঙ্গে আর-এক সভ্যতার গড়নের পার্থক্য ঘটে শােধ বাহ্যবস্তুর আনকল্যে এবং প্রতিকলতায়। এ পার্থক্য প্রাচীনকালে যেমন স্থল ছিল, বৰ্তমানে তেমনি সক্ষম হয়ে আসছে; তার প্রথম কারণ, একালে এক জাতির সঙ্গে আর-এক জাতির দেশের ও সেইসঙ্গে দেহের এবং মনেরও ব্যবধান কমে আসছে। আর তার দ্বিতীয় কারণ এই যে, বতমানে মানষে বস্তুজগতের ততটা অধীন নয়, বস্তুজগৎ মানষের যতটা অধীন। জাতিতে জাতিতে মনের ও ব্যবহারের পার্থক্য কমে আসছে বলে এ ভয় পাবার দরকার নেই যে, মানবজীবন বৈচিত্র্যহীন হয়ে পড়বে। জাতিতে জাতিতে প্ৰভেদ যেমন কমে আসছে, ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে প্ৰভেদ তেমনি বেড়ে চলেছে। এক কথায় বিশিষ্টতা এখন জাতিকে ত্যাগ করে ব্যক্তিকে আশ্রয় করেছে। আমার বিশ্ববাস, ভবিষ্যতের মানবসভ্যতা এই ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের গণে অপবৰ্ণ বৈচিত্ৰ্য লাভ করবে এবং এই বিচিত্ৰতাই হবে তার বিশিস্টতা। অন্তত আমাদের সভ্যতার জন্যে সে ভাবনা নেই। ভারতবর্ষ যদি একদেশ হিসেবে ধরা যায়, তা হলে সে দেশের সভ্যতা যােগপৎ হরবোলা ও বহরমপী হতে বাধ্য। ভবিষ্যতে যা হবার সম্পভাবনা তা নাও হতে পারে; কিন্তু অতীতে যা হয়ে গেছে তা যে হয়ে গেছে তার আর সন্দেহ নেই। এবং প্রতি প্রাচীন সভ্যতার যে একটা বিশেষ রূপ ও বিশেষ ধমৰ্শ আছে, সে কথাও অস্বীকার করা অসম্পভব। অথচ এ-সকল সভ্যতার সামাজিক ব্যবহার এবং মনোভাবের মিলও বড়ো কম নয়। পন্ডিত ব্যক্তিদের মতে গ্ৰীক রোমান এবং হিন্দ, সভ্যতার ভিতর ঠিক ততখানি মিল আছে গ্ৰীক লাটিন ও সংস্কৃত ভাষার ভিতর যতখানি মিল আছে; এবং সে মিল প্রথমত কম নয়, দ্বিতীয়ত তা ধাতুগত। যদিীচ আমি পন্ডিত নই, তবও এ মত গ্রাহ্য করতে আমি কিছমাত্র কুণ্ঠিত নই। তার কারণ, আমার বিশ্ববাস, সকল সভ্যতারই ধাতু এক, প্রত্যয় শােধ আলাদা। সে যাই হোক, যে-কাটি প্রাচীন সভ্যতার সঙ্গে আমার পরিচয় আছে, সে সবগলিই, আমার মনে হয়, একজাতীয়, অর্থাৎ আমার