পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

OOR প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ পাওয়া গেছে, সতরাং সাঁতার কাটতে হবে- শািন্ধ এলোমেলোভাবে, অতিবেগে হাত-পা ছাড়লে চলবে না; তাতে পাঁচজনে হাসবে, দশজনে ‘বাহবা কি বাহবা, কেয়াবাৎ কেয়াবাৎ" বলবে, কিন্তু আমরা লাভের মধ্যে শীঘ্রই এলিয়ে পড়ব এবং নাকানি-চোবানি খাব। পবেই বলেছি যে, আমরা বাঙালিমাত্রেই ঐ একই বিলেতি ক্ষরে মাথা মড়িয়েছি। শােধ কারো মাথায় কাকপক্ষ অবশিষ্ট, কারো মাথায়-বা শােধ টিকি; যাঁর যেটকু অবশিষ্ট আছে, তিনি সেইটেই সবদেশীয়তার ধৰজাস্বরপ আস্ফালন করেন। এ ব্যাপারে। আমাদের ইঙ্গিবন্ডগ-দলের মন ভারি করবার কোনো কারণ নেই। ইউরোপীয় সভ্যতার সংস্পশোঁ আমাদের জাতি যদি কোনো সন্থায়ী সাফল্য লাভ করে থাকে তো সে মনে, আর যা যা ক্ষণস্থায়ী কুফল লাভ করেছে, সে বাহ্য আচারব্যবহারে। মোটামটি ধরতে গেলে এ ব্যাপারের লাভলোকসানের হিসাবটা ঐরাপ দাঁড়ায়। সেই আচার-ব্যবহারের বিজাতীয়তা আমাদের মধ্যে যেমন সম্পন্ট এবং জাজবল্যমান হয়ে উঠেছে, এমন আর অন্য কোনো শ্রেণীর লোকের মধ্যে হয় নি। সকলেই অল্পবিস্তর বিলেতি মধ্য পান করেছেন, কিন্তু পরো নেশা শােধ আমাদেরই ধরেছে। বিদেশী বস্তুর বড়ো বস্তা আমরা মাথায় বহন করছি, অপরে পটালিপাটিলা নিয়ে চলেছে। আমরা যদি আমাদের মাথার সে ভার নামাতে পারি, তা হলে অপরের পক্ষে তাদের মাথার সে ভার ঝেড়ে ফেলা কঠিন হবে না। এই সত্বদেশীয়তার কথা শােধ দেশের কথা নয়, এ ঘরেরও কথা। বাঙালি যখন নিজের সমাজ ছাড়ে, তখন সেইসঙ্গে নিজের সর্বভাব ছাড়ে না। ঢেকি সবগে গেলেও ধান ভানো; অর্থাৎ সেখানেও অপরের পায়ের চাপ না পেলে তার দিন চলে না। আমাদেরও স্বভাব তাই। নিজের সমাজের চাপ থেকে বেরিয়ে এসে বিদেশী সমাজের পায়ের চাপ আমরা পিঠে তুলে নিই। বাঙালিজাতকে পিটে গড়া হয় নি। আমরা ঢালাই হতে ভালোবাসি। এক ছাঁচ থেকে বেরোলে আমরা অন্য ছাঁচে না পড়লে ঠান্ডা হই নে। অন্যাকরণ আমাদের স্বাভাবিক। এবং অন্যাকরণে যেহেতু শােধ উপকরণ সংগ্ৰহ করা যায়, কিন্তু কিছই আত্মসাৎ করা যায় না, সেই কারণে আমরা বিলেতি সভ্যতার উপকরণে আমাদের দৈনিক জীবন নিতান্ত ভারাক্রান্ত করে তুলেছি। আমাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো অস্থি-মজায় অনভব করেছেন যে, বিলেতি সভ্যতার কুলিগিরির মজরি পোষায় না। কিন্তু দ-একজন ছাড়া মািখ ফটে সে কথা বলতে বড়ো কেউ সাহসী হন নি। দেশীয় সমাজের রীতিনীতির অধীনতার মধ্যে, কায্যের না। হোক, চিন্তার স্বাধীনতা আছে। যার মন আছে, তার সামাজিক আচার-ব্যবহার সম্পবন্ধে স্বাধীনভাবে চিন্তা করবার এবং মতামত বান্ত করবার অধিকার আছে; কিন্তু বিলাতের অন্যাকরণে যে বাঙালি ঘর বাঁধে, তার একািল-ওকািল দকিল যায়। আমাদের মধ্যে যার মন যত ঢিলে, তার সাহেবিয়ানার অটিা অটি তত বেশি। ইউরোপীয় সভ্যতার প্রাণ কোথায় যে বৰ্ব্বতে পারে না, সে তার সবাঙ্গে হাতড়ে বেড়ায়। আমরা অনেকে একটা খোরপোশের বন্দোবস্ত করতে বিলেত যাই, সতরাং বিলেতি সভ্যতার যে শািন্ধ খাওয়া-পরার অংশটা আয়ত্ত করতে চেন্টা করব, এর আর আশচযা কি। কিন্তু দভাগ্যের বিষয় এই যে, যে আরামের লোভে আমরা সবােসৰ