পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

OO8 প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ এ ব্যাপারে দই লক্ষণেরই সাক্ষাৎ পাওয়া গেছে। ঐ দশ্য-কাব্যের পিছনে একটি দশন আছে, একটি কবিত্ব আছে; সেই কবিত্বপণ দর্শন কিংবা দার্শনিক কবিত্বের প্রকাশ নিউ ইন্ডিয়া সংবাদপত্রে। উক্ত ব্যাপারের সপক্ষে নিউ ইন্ডিয়ার মতামত, ইন্ডিয়া না হোক নিউ বটে। জস্টিস অনকােল মােখাজির জীবনীর ভাষা। যেমন নতুন, এর ভাবও তেমনি নতুন; এবং উভয় রচনাই এক উপায়ে সিদ্ধ হয়েছে। ইংরেজি ফরাসি লাটিন গ্ৰীক এবং ইটালিয়ান নানা ছোটো-বড়ো বাছা-বাছা বাক্য ও পদের অসংগত সমাবেশে মখোপাধ্যায় মহাশয়ের জীবনীলেখকের রচনা ভাষার রাজ্যে যেমন এক অপােব কীতি, জীবতত্ত্ব সমাজতত্ত্ব ইতিহাস পরাণ ধর্মশাস্ত্র প্রভাতি সকল শাস্ত্রের ছোটাে-বড়ো নানা বাছা-বাছা শব্দ এবং বাক্যের অসংগত সমাবেশে সম্পাদক মহাশয়ের রচনা চিন্তার রাজ্যে তেমনি এক অপবাকীতি । লেখক কিছই বাদ দেন নি-চিত্রকলাও নয়, নিত্যকলাও নয়। কলাবিদ্যার কতকটা জ্ঞান অনেকটা চার উপর নিভাির করে, কিন্তু অসমসাহসী লেখকের পক্ষে ঠিক তার উলটো। দাম্পিভকতার বলে অজ্ঞতা বিজ্ঞতার সিংহাসনে অধিরোহণ করতে পারে। কলাবিদ্যার শািন্ধ শেষাংশ দেখাবার চেন্টা করে অনেকে, তাঁরা যে শােধ তার প্রথমাংশ জানেন, এই প্রমাণ করেন। এ বিশব ভগবানের লীলাখেলা হতে পারে, কিন্তু সমাজের সন্টি স্থিতি এবং উন্নতি মানষের লীলাখেলার ফল নয়। এই প্রবন্ধে উক্ত ব্যাপারের অবতারণা করবার একটা বিশেষ সার্থকতা আছে। আমাদের নকল সভ্যতা এর উদ্ধেৰ আর উঠতে পারে না। আমাদের দোলের ঐ শেষসীমা, পেন্ডুলামকে ঐখান হতেই ফিরতে হবে, এবং কার্যত ফিরতে আরম্ভ করেছে। ঘরে বিদেশী অনাচারের ঠেলা এবং বাইরে বিদেশী অত্যাচারের চাপ, এই দায়ের ভিতর পড়ে যাঁরা কিঞ্চিৎ বেদনা অন্যভব করছিলেন, তাঁদের অনেকেরই আজ চৈতন্য হয়েছে। ঐ ঘটনায় আমাদের মধ্যে অনেক অন্যমনস্ক লোকেরও মনে পড়ে গেছে যে, আমাদের একটা সমাজ ব’লে কোনো জিনিস নেই। আমরা ঝরাপাতার দল, হাওয়ায় আমাদের কখনো-বা। একত্র জড় করে, কখনো-বা ছড়িয়ে দেয়। গাছের অসংখ্য পাতা প্রত্যেকে স্বতন্ত্র হলেও তাদের সকলের ভিতর নাড়ির এবং রক্তের বন্ধন আছে; তাদের একের প্রাণের মলেও যেখানে, অপরের প্রাণের মলেও সেখানে— দেশের মাটিতে। কিন্তু আজ আমাদের অনেকেরই চোখ ফটেছে। আমরা নিজের নিজের সংকীর্ণ সমাজ ত্যাগ করলেও হিন্দসমাজ আমাদের ত্যাগ করে নি। আমরা নিজেরা শােধ সেই বহৎ সমাজের মধ্যে আর-একটি সংকীর্ণ সমাজ গড়তে চেন্টা করেছিলাম, সৌভাগ্যক্রমে তাতে কৃতকাৰ্য হই নি। আজকাল ভারতবাসীর দেহে নতুন প্রাণ এসেছে; হিন্দসমাজ একটি সবাহৎ সত্বদেশী সমাজে পরিণত হচ্ছে, জাতের ভাব দরি হয়ে জাতীয় ভােব উপস্থিত হয়েছে, আমরা পরস্পরের পার্থক্য ভুলে গিয়ে স্বদেশীর সঙ্গে বিদেশীর পার্থক্য অন্যভব করতে আরম্ভ করেছি। এ অবস্থায় আমাদের সবদেশীয়তায় ফেরার অর্থ আমরা যে বরাবর সর্বদেশ ও সবজাতির অন্তর্ভূত হয়েই আছি, সেই বিষয়ে স্পষ্টভজ্ঞান জন্মানো। আমরা যে-সমাজে ফিরছি, সে-সমাজ পাবে ছিল না, আজও পর্ণাবয়বপ্রাপ্ত হয় নি, ভবিষ্যতে তার রােপ যে কি হবে, তাও আমরা আজ ঠিক ধরতে পারি নে। তার স্বরপ জানিবারও কোনো