পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

O \OV) প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ সে সমাজে প্রাণের যে প্রধান লক্ষণ-বাইরের অবস্থার উপযোগী আত্মপরিবতনসে লক্ষণ প্রচুর পরিমাণে দেখা যাবে। এ জগৎ গম ধাতু হতে উৎপন্ন, এমন গণী আমরা কেউ নই যে জগতের ধাত বদলে দিতে পারি। সবদেশীভাবের মল হতে অনেক আশার ফল ফটবে, কিন্তু ফল ধরবে না। দেশের মাটি ভালোবাসি বলে যে, মাটি নিতে হবে, মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হবে, শেষটা মাটি হতে হবে, এ ভুল যেন কেউ না করেন। আমরা আজ যখন জীবনের পথে অগ্রসর হতে চলেছি, তখন এইটে মনে রাখতে হবে যে, দেশের মাটি আমাদের পদক্ষেপের পক্ষে ভগবানদত্ত অটল নিভাির। অতীতের যে আগােন নিবেছে, যার এখন ভস্মমাত্ৰ অৱশিষ্ট আছে তাতে অতি ভক্তিভরে বাতাস দিলেও শািন্ধ ছাই উড়িয়ে সমাজের চোখে ফেলব : কিন্তু আমাদের জাতির প্রাণে যেখানে আজও আগন আছে, সেখানেই ফ্য দিতে হবে, পাখা করতে হবে। যদি কেউ জিজ্ঞেস করেন, কোথায় শািন্ধ ছাই আর কোথায় ছাই-ঢাকা আগন আছে কি করে জানিব ? তার উত্তর, যদি সপশ করে আগন না চিনতে পার তো পাঁজ-পাঁথির সাহায্যে তা পারবে না। অতঃপর ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে এই যে, আমাদের এগোতে হবে। বড়োগোছের একটা লাফ মারবার পর্বে মানষে কিঞ্চিৎ পিছ হটে পাল্লা নেয় ; আমাদের সমাজ এখন পাল্লা নিচ্ছে। সরীসাপের মতো সমাজও ক্ৰমাগত দেহকে আকু৭gন-প্রসারণ করে অগ্রসর হয়। কি উপায়ে কতদার পর্যন্ত আমাদের সামাজিক দেহের আজ আকুণ্ডন করা কতব্য, সেই সম্পবন্ধে গোটাকতক কথা বলতে উদ্যত হয়েছি। ܓ বিবাহিত জীবনের পরিণাম সম্পবন্ধে পাঞ্জাবি ভাষায় একটি প্রবাদ আছে - ভুল গেয়া রাগরগুগ, ভুল গেয়া ইয়াকড়ি, ইয়াদ রাহা আজ খালি তেল নন লকড়ি। ইংলন্ডের সঙ্গে ভারতবর্ষের সম্প্রবন্ধ আজকাল কতকটা ঐ ভাবের দাঁড়িয়েছে। আমরা শিক্ষিত ভারতবাসীরা এতদিন প্রভুর চিত্ত আকর্ষণ করবার জন্য কতই-না হাবভাব লীলাখেলার চর্চা করেছি। ওনার মনোমত কেশবিন্যাস বেশবিন্যাস বাগবিন্যাসের চাতুরী অভ্যাস করেছি। আত্মহারা হয়ে ইউরোপের আত্মীয় হতে যত্ন ও পরিশ্রমের ত্রটি করি নি। এত করেও যখন মন পেলাম না, তখন মান-অভিমানের পালা শার করলাম। ফল তাতে উলটাে হ’ল— দাম্পত্য প্রণয়ের দাবি করাতে দাম্পত্য কলহের সন্টি হয়েছে। তাই আজ তেল নন লকড়ির কথাই আমাদের মনে প্রাধান্য লাভ করেছে। মানবজাতিকে আমরা যে যেই ভাবে দেখি-না কেন, মানবজীবনে সকলেই তেল নন লকড়ির গরত্ন স্বীকার করতে বাধ্য। দেহকে আত্মার কারাগারই মনে করি, আর আত্মার মন্দিরই মনে করি, এ পথিবীতে দেহমানের অবিচ্ছেদ্য সম্পবন্ধের ভিত্তির উপর ব্যক্তিগত ও জাতিগত জীবন গড়তে হবে। ইহলো কেব সত্যকে মিথ্যা জ্ঞান করলে শািন্ধ, পরলোকপ্রাপিতর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। হিন্দশাস্ত্রের মতে অন্ন প্রাণ। সতরাং অন্নচিন্তাই প্রাণীমাত্রেরই আদিম চিন্তা। এই