পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তেল নন লকড়ি OOCR অন্নচিন্তা হতে উদ্ধার না পেলে অন্য চিন্তা প্রায় অসম্পভব হয়ে পড়ে। তেল নান লকড়ির অধীনতাপাশ মোচন না করতে পারলে মনের এবং আত্মার পরো স্বাধীনতা পাওয়া যায় না। মেটিরিয়াল প্রসপারিটি সভ্যতার চরম লক্ষ্য নয়, কিন্তু একটি বিশিষ্ট উপায়। তেল নন লকড়ির অধীনতা হতে মন্ত হবার একমাত্র উপায়তেল নন লকড়ির সংস্থান করা। আমাদের আজ হঠাৎ চৈতন্য হয়েছে যে, ভারতবাসীর সে সংস্থান নেই। আমরা শকিয়ে যাচ্ছি, কেননা দেশের রস বিদেশে টেনে নিচ্ছে। নিজ দেশের রস নিজ দেহের রক্তে কিরাপে পরিণত করতে পারি, সেই আমাদের প্রধান সমস্যা। আমরা যদি ভুলে গিয়ে না থাকি, তা হলে আমাদের ‘রােগরঙ্গ ইয়াকড়ি ভুলে যেতে হবে, আর আমাদের মনে যদি না থাকে, তা হলে মনে রাখতে হবে শােধ, ‘তেল নন লকড়ি’। রাস্কিন সমস্ত জীবন ধরে ইংলন্ডকে এই বোঝাতে চেন্টা করেছেন যে, ইকনমিকস-এই গ্রীক শব্দের আদিম অর্থ হাউসহোল্ড ম্যানেজমেণ্ট, অর্থাৎ গোরস্থালি। প্রতি গহে যদি লক্ষমী না থাকেন, তা হলে সমগ্রজাতি লক্ষীছাড়া হবে। ঘর যদি অগোছােল রাখি, তা হলে হাটে-বাজারে যতই কেনা-বেচা কর-না কেন, তাতে নিজে কিংবা জাতি যথার্থ শ্ৰী এবং সখি লাভে সমর্থ হবে না। এ মতের মধ্যে এইটকু খাঁটি সত্য নিহিত আছে যে, দশে মিলে জাতীয় সমদ্বিধলাভের যে সমবেত চেন্টা করি, তার সফল আমরা ঘরে ঘরে স্বেচ্ছাচারিতায় নিৰ্ম্মফল করে দিতে পারি। আমরা যদি সকলে একত্র হয়ে বাইরে এক দিকে টানি, আর প্রতি লোক ঘরে এসে তার উলটাে টান টানি- তা হলে ঘর বার দই নন্ট হবে। আমি শরাস্কিনের শিষ্যস্বরপে এই কথা প্রচার করতে উদ্যত হয়েছি যে, সগহিণীর প্রথম এবং প্রধান কাজ গাহের সম্পমাজনা করা। O আমরা যে গহে বাস করি, সে যে কোন দেশীয় বলা কঠিন। বাংলার বাইরে, কি স্বদেশে কি বিদেশে, কোথাও তার জড়ি দেখতে পাই নে। গহ যেমন সমাজের মল, তেমনি আবার শহরেরও বনিয়াদ। গহ হতে পল্লি, পল্লি হতে নগর, নগর হতে শহর-ক্ৰমবিকাশের এই নিয়ম। রোম প্যারিস প্রভাতি বনেদি শহরের আকিটেকচারেতেই তার ইতিহাস লিপিবদ্ধ। ঐ আকিটেকচারের প্রসাদেই নাগরিকগণ বতমানে অতীতের সঙ্গে ঘর করে, অতীতের সখ দঃখ আশা ভরসা সফলতা ও বিফলতা, গৌরব ও লজ অলক্ষিতে তাদের মন অধিকার করে নেয়; প্রত্যেকেই নিজের আত্মার ভিতর বহত্তর জাতীয় আত্মার অস্তিত্ব অনভব করে। তাদের পক্ষে সািবজাতীয়তার ও সর্বদেশীয়তার কাছে নিজেদের ধরা দেওয়া নিতান্ত সবাভাবিক ; তা হতে মন্তি পাওয়াই আয়াসসাধ্য। আমাদের ভিতর মহন্দন্তঃকরণ ব্যক্তিরা যেমন অহংজ্ঞান খিব ক’রে সবজাতির পায়ে আত্মসমপণ করাটা জীবনের চরম লক্ষ্য বলে মনে করেন, তেমনি ইউরোপের মহন্দন্তঃকরণ ব্যক্তিরাও সবজাতিজ্ঞান খব ক’রে মানবজাতির পায়ে আত্মসমপণ করাটা জীবনের চরম লক্ষ্য বলে মনে করেন। আমাদের সাধনার বিষয় হচ্ছে ন্যাশনালিজম, তাদের উচ্চ সাধনার বিষয় হচ্ছে ইনস্টার