পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\SO 2 y প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ ন্যাশনালিজম। সে যাই হোক, কলিকাতার মতো ভুইফোঁড় শহরে শ্ৰীহীন অৰ্থহীন। কিন্ভূতকিমাকার ভুইফোঁড় গহে বাস করে আমাদের পক্ষে স্বদেশী ভাব রক্ষা করাটা সহজ নয়। চকমেলানো বাড়ি হালফ্যাশানে পণগুত্ব প্রাপ্ত হয়েছে। একটি লম্বা গোছের ঘর, তার এপাশে দটি, ওপাশে দটি- এই পাঁচ কামরা নিয়ে আমাদের গহ৷ মধ্যের ঘরটি হচ্ছে বাইরের ঘর, এবং উভয় পাশেবর বহিদিকের ঘর-কাটি হচ্ছে অন্দর। বাসস্থানের এই উলটোেপালটা ভাবের সঙ্গে আমাদের সামাজিক জীবনের বরাবর যোগ রয়ে গেছে। আমাদের গ্রীন্মের দেশে ঘরে হাওয়াও চাই ছায়াও চাই, একসঙ্গে দই পাওয়া অসম্পভব বলে এ দেশের গহ দ ভাগে বিভক্ত হওয়া দরকার। এক অংশ বায়ার পক্ষে যথেস্ট খোলা, অপর অংশ সহযোির পক্ষে যথেষ্ট রাদ্ধ। পথিবীর সর্বত্রই পঞ্চভূত মিলে মানষের গাহনিমাণের হিসাব বাতলে দেয়। প্রকৃতিই এ দেশের গহ সদর এবং অন্দরে ভাগ করতে শিখিয়েছিলেন। এবং আমাদের সমাজের গঠনও গাহের গঠনের অনেকটা অনসরণ করেছে। এই কারণে গ্রীষ্মমপ্রধান দেশেই অবরোধ একটি সামাজিক প্রথা। আমার বিশবাস, এই কড়া রোদ এবং চড়া আলোর দেশে অসন্যািম্পশ্যা হবার লোভেই রমণীজাতি স্বেচ্ছায় অন্তঃপরিবাসিনী হয়েছেন। যেখানে গহে সন্ত্রীপরিষের সম্ববতন্ত্র রাজ্যের সীমা নিদিষ্ট নেই, সেখানে সমাজেও সত্রীপরিষের সাম্য অর্থে ঐক্য—এই ভুল বিশ্ববাস জন্মলাভ করে। ইংরেজিয়ানার প্রসাদে আমাদের বাসগাহের সদর অন্দর ভেস্তে যাবার প্রধান ফল এই যে, আমাদের সন্ত্রীপরিষ উভয়েই গহে অনেকটা সংকুচিত ভাবে বাস করে। আমাদের ড্রয়িংরম পাড়াপাড়শীর বৈঠকখানা হতে পারে না, এবং বাড়ির কোনো অংশই মেয়েদের দাগ নয়। এ দেশটি যে বিদেশ, সেটা সবান্দা মনে জাগরকে রাখবার জন্য ইংরেজ দেশীয় সমাজ হতে আলগোছ হয়ে থাকেন, নইলে ভয় পাছে জাতিরক্ষা না হয়। আমরা তাঁদের অন্যাকরণে বাসা বাঁধলে অনিচ্ছাসত্ত্বেও সাব-সমাজ হতে দরি হয়ে পড়ি। মোটামটি আমার বক্তব্য কথা। এই, মান ষমাত্রেরই দেশের সঙ্গে প্রধান যোগ গহ দিয়ে; সর্বদেশীয়তার গোড়াপত্তন ঐখানেই, গহ্যসত্ৰ হতেই মানবধর্মশাস্ত্রের উৎপত্তি। গাহের রূপান্তরের সঙ্গে সঙ্গে গহীর রপান্তরও অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু এ-সব সত্ত্বেও আমি কাউকে বাড়িবদলানোর পরামর্শ দিয়ে লোকসমাজে নিজেকে বিষয়বদ্ধিহীন বলে প্রমাণ করতে রাজি নই। এ বিষয়ে আমার ভবিষ্যতের আশার একমাত্র ভরসা—একটা বড়োগোছের ভূমিকম্প। গহে প্ৰবেশ করেই এক অপবর্ণ দশ্য আমাদের চোখে পড়ে। আমরা দেখতে পাই যে, বিদেশী বস্তু আমাদের গহ আক্ৰমণ করেছে, এবং তার অন্তরতম প্রদেশ পর্যন্ত অধিকার করে বসে আছে। সাহেবিয়ানার খাতিরে আমাদের গহসন্তজা অসম্ভবরকম জটিল হয়ে পড়েছে। আসবাবের ভিড় ঠেলে ঘরে ঢোকাই মাশকিল, চলে-ফিরে বেড়াবার স্বাধীনতা তো একেবারেই নেই। এই জটিলতার মধ্যে সকলকেই কুটিল গতি অবলম্ববন করতে হয়। প্রথমেই মনে হয় যে, এ ঘর বাসের জন্য নয়, ব্যবহারের জন্য নয়- সাজাবার জন্য, দেখাবার জন্য, গহস্বামীর ধন এবং শিক্ষার পরিচয় দেবার একটা প্রদর্শনী মাত্র, লক্ষী-সরস্বতীর মিলনের অপ্রশস্ত ক্ষেত্রে। আমাদের নাতন ধরনের গহসঙ্গজার বর্ণনা করবার কোনো দরকার নেই, কারণ তা