পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

988 প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ প্রকৃতি; সতরাং উচ্চশ্রেণীর সাহিত্য দেশকাল-অতিরিন্ত মানবহৃদয়ের চিরন্তন অথচ চিরনবীন ভাবসকল নিয়ে কারবার করে। এই হেতু সকল দেশের উচ্চ আগের সাহিত্যে বিশ্ববিমানবের সমান অধিকার আছে। কিন্তু ইউরোপীয় সাহিত্যে যে অংশটকু আটা, সে অংশ আমরা ঠিক ধরতে পারি নে। বিদেশী লেখকের লেখনীর পরিচয় আমরা অনেকেই পাই না। সে যাই হোক, সাহিত্যে এবং আটে, কাব্যে এবং কলায় প্রধান পার্থক্য এই যে, কাব্যের উপকরণ অন্তজগৎ হতে আসে, কলার উপকরণ বাহ্যজগৎ হতে আসে। মনোজগতে দেশভেদ নেই, এশিয়া ইউরোপ নেই, এক কথায়, মনোজগতের ভূগোল নেই। কিন্তু বাহ্যজগতে ঠিক তার উলটাে। এক দেশের ভৌতিক গঠন অপর দেশ হতে বিভিন্ন। দেশভেদে বৰ্ণ-গন্ধ-শৰদ-সপশরসের জাতিভেদ সন্টি হয়েছে। সেইজন্যই কাব্য অপেক্ষা কলার ক্ষেত্র সংকীর্ণ। এই উপকরণের বিশেষত্ব হতে প্রতি দেশের শিল্পকলার বিশেষত্ব জন্মলাভ করে। আট সম্পবন্ধে অতীন্দ্ৰিয়তা অসম্পভব; সতরাং এ ক্ষেত্রে সবদেশের অধীনতাপাশ মোচন করবার জো নেই। বিজ্ঞানের বিষয়ও বস্তুজগৎ; কিন্তু বিজ্ঞান বিশবিজনীন, কেননা বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য বস্তুজগতের বিশেষত্ব বাদ দিয়ে তার সামান্য ব্রুিয়াগলির সন্ধান নেওয়া। আর্টের সম্পপক বস্তুজগতের শােধ বিশেষ্য ও বিশেষণের সঙ্গে। বিজ্ঞানের অভিপ্রায় বিশবকে এক করে আনা, আর্টের কায নিত্য বৈচিত্ৰ্য সাধন। বিজ্ঞানের লক্ষ্য মলের দিকে, আর্টের লক্ষ্য ফলের দিকে। বিজ্ঞানের দেশ নেই, আর্টের আছে। এই-সকল কারণে নিউটন এবং ডারউইন আমাদের জ্ঞাতি, শেকসপিয়ার এবং মিলটন আমাদের কুটস্পােব, কিন্তু রাফায়েল এবং বীঠোফেন আমাদের পর। এইজন্যই জাপান ইউরোপের বিজ্ঞান আয়ত্ত করেছে, কিন্তু নিজের আর্ট ছাড়ে নি। আমাদের মধ্যে যদি কেহ ইউরোপের উচচাঙ্গের অ্যাটের যথাৰ্থ মমগ্রহণ করতে পারেন, তিনি অবশ্য ভক্তির পাত্র। পথিবীর যে দেশের যা-কিছ শ্রেষ্ঠ কীতি আছে, তার সঙ্গে আত্মীয়তা স্থাপন করা মানবের মন্তির একটি প্রকৃদ্টি উপায়। কিন্তু যখন প্রায়ই দেখতে পাই যে, যিনি স্বরগ্রামের ‘গা’ থেকে ‘পার প্রতেদ ধরতে পারেন না, তিনিই বীঠোফেনের প্রধান সমজদার; এবং যিনি রঙটা নীল কিংবা সবজি বিশেষ ঠাওর করেও বলতে অপারগ তিনিই টিশিয়ানের চিত্রে মগধ, তখন প্ৰজাতির ভবিষ্যতের বিষয় একটা হতাশ হয়ে পড়তে হয়। সে যাই হোক, উপস্থিত প্রবন্ধে যে-সকল বস্তুর আলোচনা করতে প্ৰবত্ত হয়েছি- যথা ছিটের পরদা, ব্রােসলসের কারপেট, চীনের পাতুল, কাচের ফলদানি, কি স্বদেশী কি বিদেশী সকলপ্রকার আর্টের অভাবেই তাদের বিশেষত্ব। বিলাতের সচরাচর গািহ-ব্যবহাব বস্তুগলি প্রায়ই কদাকার এবং কুৎসিত। এর দটি কারণ আছে। পাবেই বলেছি, বিজ্ঞানের ন্যায় আটোিরও বিষয় বাহ্যজগৎ । যা ইন্দ্ৰিয়গোচর নয়, তা বিজ্ঞানের বিষয় হতে পারে না, আর্টেরও বিষয় হতে পারে না। ইন্দ্ৰিয় যে উপকরণ সংগ্রহ করে, মন তাই নিয়ে কারিগরি করে। এই বৰ্ণ-গন্ধ-শব্দ-সপশা-ময় জগতে যে ইন্দ্ৰিয়গোচর বিষয়ে মন সখেলাভ করে শােধ, তাই আর্টের উপকরণ। বস্তুর সেই সখদায়ক গণের নাম এস থেটিকাল কোয়ালিটি, অর্থাৎ ‘রপ”; এবং মনের সেই সংখলাভ করবার ক্ষমতার নাম এস থেটিক ফ্যাকালটি, অর্থাৎ ‘রপভজ্ঞান’। ইংরেজ বিশেষ