পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

OG 8 প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ সাহিত্যের বস্তু যে চোরাই-মাল, তা ইংরেজি সাহিত্যের পাঠকমাত্রেরই কাছে ধরা পড়ে। আমরা ইংরেজি সাহিত্যের সোনারপো যা চুরি করি, তা গলিয়ে নিতেও শিখি নি। এই তো গেল সাহিত্যের কথা। রাজনীতি-বিষয়ে আমাদের সকল ব্যাপার যে আগাগোড়াই নকল, এ বিষয়ে বোধ হয়। আর দ-মত নেই, সতরাং সে সম্পবন্ধে বেশিকিছা বলা নিতান্তই নিৰ্ম্মপ্রয়োজন। আমাদের মনে মনে বিশবাস যে, ধাম এবং দর্শন এই দটি জিনিস আমাদের একচেটে; এবং অন্য-কোনো বিষয়ে না হোক, এই দই বিষয়ে আমাদের সহজ কৃতিত্ব কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। ইংরেজি-শিক্ষিত ভারতবাসীদের এ বিশ্ববাস মে সম্পৰ্ণে অমলক, তার প্রমাণস্বরপ দেখানো যেতে পারে যে, ঐ শ্রেণীর লোকের হাতে মনাির ধম রিলিজিঅন হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ ভুল তরজমার বলে ব্যবহারশাস্ত্র আধ্যাত্মিক ব্যাপার হয়ে উঠেছে। ধমশাস্ত্র এবং মোক্ষশাস্ত্রের ভেদজ্ঞান আমাদের লািপত হয়েছে। ধমের অর্থ ধরে রাখা এবং মোক্ষের অর্থ ছেড়ে দেওয়া, সতরাং এ দায়ের কাজ যে এক নয়, তা শােধ ইংরেজিনবিশ আৰ্য-সন্তানরাই বৰ্ব্বতে পারেন না। গীতা আমাদের হাতে পড়বামাত্র তার হরিভক্তি উড়ে যায়। সেই কারণে শ্ৰীযক্তি হীরেন্দ্রনাথ দত্ত ‘গীতায় ঈশবরবাদ"এর প্রতিস্ঠা করতে গিয়ে নব্য পন্ডিতসমাজে শাধ বিবাদ-বিসম্পবাদের সন্টি করেছিলেন। তার পর গীতার কম ইংরেজি work রােপ ধারণ করে আমাদের কাছে গ্রাহ্য হয়েছে; অর্থাৎ কম্যুকান্ডের কম কান্ডহীন হয়েই আমাদের কাছে উচ্চ বলে গণ্য হয়েছে। এই ভুল তরজমার প্রসাদেই যে কমের উদ্দেশ্য পরের হিত এবং নিজের আত্মার উন্নতি সাধন, পরলোকের অভু্যদয়ও নয়, সেই কম। আজকাল ইহলোকের অভু্যদয়ের জন্য ধর্ম বলে গ্রাহ্য হয়েছে। যে কােজ মানষে পেটের দায়ে নিত্য করে থাকে, তা করা কত ব্য; এইটকু শেখাবার জন্য ভগবানের যে ভোগােয়তন দেহ ধারণ ক'রে পথিবীতে অবতীর্ণ হবার আবশ্যকতা ছিল না, এ সোজা কথাটাও আমরা বঝতে পারি নে। ফলে, আমাদের-কৃত গীতার অন্যবাদ। বক্ততাতেই চলে, জীবনে কোনো কাজে লাগে না। এক দিকে আমরা এ দেশের প্রাচীন মতগালিকে যেমন ইংরেজি পোশাক পরিয়ে তার চেহারা বিলকুল বদলে দিই, তেমনি অপর দিকে ইউরোপীয় দশন-বিজ্ঞানকেও আমরা সংস্কৃত ভাষার ছদ্মবেশ পরিয়ে লোকসমাজে বার করি। নিত্যই দেখতে পাই যে, খটি জমান মাল সবদেশী বলে পাঁচজনে সাহিত্যের বাজারে কাটাতে চেন্টা করছে। হেগেলের দশন শংকরের নামে বেনামি করে অনেকে কতক পরিমাণে অজ্ঞ লোকদের কাছে চালিয়েও দিয়েছেন। আমাদের মন্তির জন্য হেগেলেরও আবশ্যক আছে, শংকরেরও আবশ্যক আছে; কিন্তু তাই বলে হেগেলের মস্তক মন্ডন করে তাঁকে আমাদের স্বহস্তেরচিত শতগ্রন্থিময় কথা পরিয়ে শংকর বলে সাহিত্যসমাজে পরিচিত করে দেওয়াতে কোনো লাভ নেই। হেগেলকে ফকির না করে যদি শংকরকে গহস্থ করতে পারি, তাতে আমাদের উপকার বেশি। বিজ্ঞান সম্বন্ধেও ঐরােপ ভুল তরজমা অনেক অনৰ্থ ঘটিয়েছে। উদাহরণস্বরাপ ইভলিউশনেব কথাটা ধরা যাক। ইভলিউশনের দোহাই না দিয়ে আমরা আজকাল কথাই কইতে পারি নে। আমরা উন্নতিশীল হই আর স্থিতিশীলই হই, আমাদের