পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বতমান সভ্যতা বনাম বতমান যন্ধ বতমান যন্ধের কার্যকারণ সম্পবন্ধে ইউরোপে যদি কোনো বাজে কথা কিংবা অসংগত কথা বলা হয় তাতে আশ্চৰ্য হবার কোনো কারণ নেই, কেননা মানষে যখন যােগপৎ ক্লািন্ধ ও ক্ষব্ধ হয়ে ওঠে, মনে যখন রাগ ও ফেবষই প্রাধান্য লাভ করে তখন তার পক্ষে বাক্যের সংযম কতক পরিমাণে হারানো স্বাভাবিক। ঘরে ডাকাত পড়লে তার সঙ্গে মিন্ট এবং শিম্পন্ট আলাপ করা সম্পভবত দেবতার পক্ষে স্বাভাবিক, মানষের পক্ষে নয়; এবং ইউরোপের লোক দেবতা নয়, মানষি। কিন্তু এই যন্ধ ব্যাপারটি আমাদের পক্ষে নিরপেক্ষভাবে বিচার করবার বিশেষ কোনো বাধা নেই। আমরা ও-জালে জড়িয়ে পড়ি নি; এখন পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে এ ব্যাপারের যা-কিছ যোগ আছে সে শােধ তারের-নাড়ির নয়। ইউরোপে সরাসরি মিলে যে ভবসমদ্র মন্থন করেছেন তার ফলে অমতেই উঠক আর হলাহলাই উঠক, তার ভাগ আমরাও পাব; কিন্তু সে ভবিষ্যতে। সে বস্তু পান করবার পাবেই আমাদের দণ্টিবিভ্রম হবার কোনো কারণ নেই। বরং এই অবসরে আমরা যদি ব্যাপারটি ঠিক ভাবে দেখতে ও বাকীতে শিখি তা হলে এর ভবিষ্যৎ ফলাফলের জন্য আমরা অনেকটা প্রস্তুত থাকব। এই সমরানলে যে স্পর্বতমান ইউরোপীয় সভ্যতার অপিনপরীক্ষা হয়ে যাবে সে কথা সত্য। কিন্তু ‘বর্তমান ইউরোপীয় সভ্যতার অর্থ যে কি, সে বিষয়ে দেখতে পাই অনেকের তেমন সম্পন্ট ধারণা নেই। এমন-কি, কেউ কেউ এই উপলক্ষে ইউরোপীয় সভ্যতার প্রতি নিতান্ত অবজ্ঞা প্রকাশ করতে কুণ্ঠিত হচ্ছেন না। আমার মতে ইউরোপের প্রতি অবজ্ঞার কথা আমাদের মখে শোভা পায় না। এ অবশ্য রচির কথা; সতরাং এ ক্ষেত্রে মতভেদের যথেস্ট অবসর আছে। মনোভাব প্রকাশ না করলেই যে, সে ভাব মন থেকে অন্তহিত হয়ে যায় তা অবশ্য নয়। অথচ এ কথাও সম্পণে সত্য যে, আমরা মখে কি বলি, তার চাইতে আমরা মনে কি ভাবি তার মাল্য আমাদের কাছে ঢের বেশি; কেননা সত্যের জ্ঞান না হলে মানষে সত্য কথা বলতে পারে না । প্রথমত কি সবদেশী, কি বিদেশী, কি নবীন, কি প্রাচীন কোনো সভ্যতাকেহে এক কথায় উড়িয়ে দেওয়া চলে না। একটি বিপল মানবসমাজের পক্ষে কিংবা বিপক্ষে ওরকম এক-তরফা ডিক্লি দেওয়ার নাম বিচার নয়। বহ মানবে বহু দিন ধরে কায়মনোবাক্যে যে সভ্যতা গড়ে তুলেছে তার ভিতর যে মনীষ্যত্ব নেই, এ কথা বলতে শােধ তিনিই অধিকারী যিনি মানষ নন। অপর পক্ষে চরম-সভ্যতা” বলে কোনো পদাৰ্থ মানষে আজ পর্যন্ত সন্টি করতে পারে নি এবং কখনো পারবে না। কেননা, পথিবী যেদিন স্বৰ্গরাজ্য হয়ে উঠবে সেদিন মানষের দেহমানের আর কোনো কাষ থাকবে না, কাজেই মানৰ তখন চিরনিদ্রা উপভোগ করতে বাধ্য হবে। অন্তত পথিবীতে এমন কোনো সভ্যতা