পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SR bf' প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ স্বীকার করিয়া থাকেন। বরং শেষোক্ত ব্যক্তি দিগকেই উত্ত, বিষয়ে জয়দেবের প্রচুর পরিমাণে প্রশংসা করিতে দেখা যায়। আমি পাবে বলিয়াছি যে, কবিতার ভাষার সৌন্দৰ্য হইতে ভাবের সৌন্দৰ্য পথক করা যায় না। ভাবের অন্যরােপ ভাষা প্রয়োগেই যথাৰ্থ কবিত্বশক্তির পরিচয় । যাহাদের মস্তিক্ষেক ভাব ও ভাষা একত্রে গঠিত হয় না। তাহারা লোকের মনোযোগ আকর্ষণ করিবার জন্য হয় ভাব-বিষয়ে পান্ডিত্য নয় ভাষা-বিষয়ে ছন্দনিমাণের কৌশল, এই দইয়ের একটির সাহায্য লাইতে বাধ্য হয়। জয়দেব আমার বিবেচনায় যথার্থ উচচ-অঙ্গের কবিতা রচনার অক্ষমতাবশত লোকসাধারণের চটক লাগাইবার অভিপ্ৰায়ে শেষোক্ত উপায় অবলম্বন করিয়াছেন। তাঁহার রচনায় কিছ অতিরিক্ত মাত্রায় কথার কারিগরি দেখা যায়। মনে কোনো-একটি বিশেষ ভাবের উদয় হইলে যে-কথাটি স্বভাবতই মখাগ্রে আসিয়া উপস্থিত হয়, জয়দেব সেটিকে চাপিয়া রাখেন। তাহার পরিবতে' শব্দশাস্ত্ৰ - খাজিয়া ভাবপ্রকাশবিষয়ে অপেক্ষাকৃত অনেকাংশে অনপযোগী আর-একটি কথা আনিয়া হাজির করেন। কালিদাসাদি যথাৰ্থ শ্রেষ্পাঠ কবিদের রচনাপ্রণালী সর্বতন্ত্র। তাঁহারা সর্বভাবতই যে কথাটি মাখে আসে। সেইটি ব্যবহার করেন; তবে তাঁহাদের ভাবের সহিত আমাদের ভাবের অনেক পার্থক্য, সতরাং যেরপে শব্দ প্রয়োগ করা তাঁহাদের পক্ষে সহজ, সাধারণ লোকের পক্ষে তাহা একান্তই দঃসাধ্য। আপনার আমার ও জয়দেবের সহিত তাঁহাদের এইটকুমাত্র তফাত । জয়দেবের ভাষার প্রধান দোষ- সাসপেন্ট rhythmএর অভাব। তাঁহার ব্যবহােত শব্দসকল একটি প্রায় সম্পপণরূপে অন্য আর-একটির ন্যায়। অতিরিক্ত মাত্রায় অকারান্ত শব্দের ব্যবহারে শবদসকলের হিসােবদীঘর্ণাদি প্রভেদ যথেস্ট পরিমাণে না থাকায়, সতরাং তাহাদের উচচারণের বৈচিত্র্য-অভাবে, জয়দেবের ভাষায় গাম্পভনীয্যের একান্ত অভাব ঘটিয়াছে। কিন্তু বাক্যের যে অংশ কেবলমাত্র শ্রবণেন্দ্রিয়গ্রাহ। তাহাও গাম্ভীর্যব্যতিরেকে সম্পপণ্য রাপে মধর হইতে পারে না। অন্যান্য বিষয়ের ন্যায় ভাষা-সম্প্রবন্ধেও গাম্পভীৰ্য্যযন্ত মাধ্যযে গাম্ভীযবিরহিত মাধয অপেক্ষা বহল পরিমাণে শ্রেণীঠ এবং শ্ৰীসম্পন্ন। গীতগোবিন্দের সহিত মেঘদতের তুলনা করিলেই দেখা যায়। গাম্ভীৰ্য্যগণবিশিষ্ট হইয়াও শেষোক্ত কাব্যের ভাষা পর্বোস্তু কাব্যের ভাষা হইতে কত উৎকৃষ্ঠািট । সমভাবে উচচারিত অকারান্ত শব্দের একত্রে বহল বিন্যাসের আর-একটি দোষ আছে, তাহাতে পাঠকমাত্রেরই পক্ষে রচনার অর্থ গ্রহণ কৰা কিঞ্চিৎ কঠিন হইয়া উঠে। বিভিন্ন বিভিন্ন শব্দসকল পরস্পর হইতে বিশেষরাপে স্বতন্ত্র না হইলে পাঠ্যকালীন তাহদের প্রত্যেকের উপর নজর পড়ে না। একটি শেলাকের অন্তর্ভূত শব্দসকলের আকৃতিগত সত্বাতন্ত্র্য যত সসপ্যািট তাহার অর্থ ও সেই পরিমাণে চট্ট, করিয়া বঝা যায়। শব্দসকলের বৈচিত্র্য বজায় রাখিয়া তাহদের ভিতর সামঞ্জস্য সন্টি করিয়া যিনি রচনাকে শ্রীতিমধার করতে পারেন। তিনিই যথার্থ ভাষার রাজা। জয়দেব তাঁহার রচনায় শব্দসকলের হিসােবদীর্ঘদি প্রভেদজনিত বন্ধীরতা ভাঙিয়া মাজিয়া-ঘষিয়া এমন মস্যােণ কািরয়াছেন যে তাহা পড়িতে গেলে তাহার উপর দিয়া রসনা ও মন দইই পিছলাইয়া যায়। প্রত্যেক শব্দটির উপর মন বসাইতে না