পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Not.< Ràd পারিলে সমস্ত রচনার অর্থের উপরেও অমনোযোগ আপনা হইতেই আসিয়া পড়ে। গীতগোবিন্দে কথার বড়ো-একটা কিছল অর্থ নাই বলিয়া জয়দেব যে চাতুরী করিয়া যাহাতে পাঠকের মন ভাবের দিকে আকৃষ্ট না হইতে পারে, সেই অভিপ্ৰায়ে উত্তপ্রকার শোলাক রচনা করিয়াছেন এমন বোধ হয় না। কিন্তু ফলে তাহাই দাঁড়াইয়াছে। এতক্ষণ পর্যন্ত আমি শােধ জয়দেবের কবিতার দোষ দেখাইয়া আসিয়াছি। তিনি যে উৎকৃষ্ঠািট কবিদিগের সহিত সমশ্রেণীতে আসন গ্রহণ করিতে পারেন না। তাহাই দেখানো আমার উদ্দেশ্য। যাঁহার কাব্যের বিষয় প্রেমের তামসিক ভাব, মানবদেহের সৌন্দৰ্য যাঁহার দন্টিতে ততটা পড়ে না, যিনি মানবদেহকে কেবল ভোগেব বিষয় বলিয়াই মনে করেন, প্রকৃতির সৌন্দয্যের সহিত যাঁহার সাক্ষাৎপরিচয় নাই, যিনি বর্ণনা করিতে হইলেই শোনা কথা আওড়ান, যাঁহার ভাষায় কবিত্ব অপেক্ষা চাতুরী অধিক- এক কথায়, যাঁহার কাব্যে সবাভাবিকতা অপেক্ষা কৃত্রিমতাই প্রাধান্য লাভ করিয়াছে, তাঁহাকে আমি উৎকৃষ্ট কবি বলিতে প্রস্তুত নাহি। ভরসা করি এ বিষয়ে আপনারাও আমার সহিত একমত। কিন্তু এ-সকল কথা সত্য হইলেও জয়দেবকে যে অনেকে বড়ো কবি বলিয়া মনে করেন। সে কথাও তো অস্বীকার করিবার জো নাই। জয়দেব সম্পবন্ধে এই সাধারণ মত কি কি কারণ -প্ৰসত তাহা আমি কতকটা নিৰ্ণয় করিতে চেণ্টা করিয়াছি। নিম্পেন সেগলির উল্লেখ করিতেছি। ó প্রথমত, শাওগাররসের বর্ণনায় জয়দেব যখন তাঁহার সমস্ত ক্ষমতা প্রস্ফটিত করিয়া তুলেন তখন তাঁহার কবিতা বিশেষরূপে স্বাভাবিক হইয়া উঠে- তখন তিনি কোনোরাপ অপ্রাকৃত কিংবা অযথার্থ কথা বলেন না। যে বিষয়ে যাহার প্রত্যক্ষ জ্ঞান আছে তাহার বর্ণনায় সে অবশ্য বিলক্ষণ নিপণ। সািরতসখালসজনিত দেহের অবস্থা তিনি কত জাতজবল্যমান করিয়া আকিতে পারেন। মনের ভাবের কথা নাই বললেন, রোমাণ্ড শীৎকার ইত্যাদি একান্ত শারীরিক ভাবসকলের বর্ণনায় তো তিনি কাহারো অপেক্ষা কম নন। আর তাঁহার ভাষায় গাম্পভীৰ্য ইত্যাদি গণ নাই বটে কিন্তু তাহা শঙ্গাররসের বর্ণনার পক্ষে বিশেষ উপযোগী। যাবতীদিগের দেহের ন্যায় তাঁহার শব্দগলিও কুসমসকুমার। যখন রােপসীদিগের কবরী শিথিল হইয়া যাইতেছে, নীবিবন্ধন খসিয়া পড়িতেছে, যখন সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গাদির বন্ধন শব্লথ হইয়া আসিতেছে তখন আর ভাষার বাঁধানি কি করিয়া প্রত্যাশা করা যায়? রাধার দেহের ন্যান্য গীতগোবিন্দের ভাষা "নিঃসহনিপতিতা লতা স্বরােপ। তাই শঙ্গাররসবর্ণনকালে তাহার ভাষা ভাবের অন্যরােপ। তিনি শঙ্গাররসের কবি। কিন্তু যে রসেরই হউন না, কবি তো বটে। এবং কবির যথাৰ্থ রচনা যে জাতিরই হউক, লোকের ভালো লাগিবেই লাগিবে, সতরাং জয়দেবের কাব্য সাধারণের একেবারেই অনাদরের সামগ্ৰী নহে।